২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই বছরের পরীক্ষাগুলো পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় কিছু পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। পরীক্ষার কাঠামো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং পরীক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য নিচে উপস্থাপন করা হলো পূর্ণাঙ্গ বিবরণ।
পরীক্ষার সময়সূচি ও পরিবর্তন
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয় ১০ এপ্রিল এবং শেষ হয় ১৩ মে। প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয় বাংলা প্রথম পত্র এবং শেষ দিন বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। সব তত্ত্বীয় পরীক্ষাগুলো প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলেছে।
প্রথমে গণিত পরীক্ষা ২০ এপ্রিল নির্ধারিত থাকলেও তা একদিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। এই রুটিন পরিবর্তনের পেছনে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, আবহাওয়া পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নমূলক প্রেক্ষাপট ছিল।
পরীক্ষার কেন্দ্র ও অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় ১৯.২৮ লাখ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক লাখ কম। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২,২৯১টি কেন্দ্রে, যেখানে ১৮,০৮৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
-
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী সংখ্যা: ১৪,৯০,১৪২ জন
-
মাদ্রাসা বোর্ডে: ২,৯৪,৭২৬ জন
-
কারিগরি বোর্ডে: ১,৪৩,৩১৩ জন
শিক্ষার্থী সংখ্যা হ্রাসের পেছনে শিক্ষাগত পরিবেশ, সামাজিক চাপ, অর্থনৈতিক অসুবিধা, এবং কোচিং বন্ধের নীতিমালা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
পরীক্ষার নির্দেশনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল:
-
পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হবে।
-
প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ; শুধুমাত্র সাধারণ ক্যালকুলেটর ব্যবহারযোগ্য।
-
পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ছিল; শুধু কেন্দ্র সচিব একমাত্র ব্যতিক্রম।
-
পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে সাধারণ জনগণের চলাচল সীমিত করা হয়।
-
পরীক্ষার সময় সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল।
এই ব্যবস্থাগুলোর ফলে নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকারের কড়া মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
আবহাওয়া ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জ
দিনাজপুরের বিরগঞ্জে একটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে, যেখানে শিক্ষার্থীরা মোমবাতির আলোতে পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়। যদিও ২৫ মিনিট পর বিদ্যুৎ ফিরে আসে, এটি পরীক্ষার মানসিক চাপ ও বাস্তব চ্যালেঞ্জের দিকটিকে স্পষ্ট করে।
বিভিন্ন এলাকায় চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ধর্মীয় সংগঠনের ডাকা হরতাল পরীক্ষা চলাকালীন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ছিল।
ফলাফল, মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে বোর্ডগুলো। ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট না হলে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করতে পারবে, যা SMS ও অনলাইনের মাধ্যমে করা যাবে।
এছাড়াও, আগামী বছর থেকে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী দক্ষতার মূল্যায়ন আরও গুরুত্ব পাবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
উপসংহার
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পরীক্ষার রুটিন, কঠোর নিরাপত্তা, পরিবেশগত ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের দিক বিবেচনা করলে বোঝা যায়—এটি শুধুমাত্র একাডেমিক পরীক্ষা নয়, বরং শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি জাতীয় মনোযোগের একটি প্রতিফলন।
পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য সাফল্য কামনা করা হচ্ছে এবং আশা করা যায়, তারা অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজেদের গন্তব্যের পথে এগিয়ে যাবে।
0 Comments