আলোচনার পটভূমি
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করে। এই আলোচনা ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে জেসিপিওএ (JCPOA) থেকে সরে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফার আলোচনা ওমানে ১২ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় দফা রোমে ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি নেতৃত্ব দেন।
মূল বিতর্কের বিষয়সমূহ
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ: যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান সম্পূর্ণভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করুক, কিন্তু ইরান তাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির অধিকার হিসেবে এটি বজায় রাখতে চায়।
মিসাইল কর্মসূচি: যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচি বন্ধের দাবি জানিয়েছে, যা ইরান প্রত্যাখ্যান করেছে।
পরিদর্শন ও নজরদারি: যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান তাদের সামরিক স্থাপনাসহ সব পারমাণবিক স্থাপনা আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করুক, যা ইরান তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।
সামরিক উপস্থিতি ও আঞ্চলিক প্রভাব: যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের মতো আঞ্চলিক মিলিশিয়াদের সমর্থন বন্ধ করুক, যা ইরান তাদের আঞ্চলিক নীতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।
আলোচনার অগ্রগতি ও স্থগিতকরণ
তৃতীয় দফার আলোচনা ওমানে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর, চতুর্থ দফার আলোচনা ৪ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইরানের প্রতিক্রিয়ার ফলে এই আলোচনা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও চ্যালেঞ্জ
নতুন মিসাইল উন্মোচন: ইরান ৪ মে একটি নতুন কঠিন জ্বালানিযুক্ত ব্যালিস্টিক মিসাইল "কাসেম বাসির" উন্মোচন করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন: আলোচনার সময় ইরান ২২ জন বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ছাড়া তিনি কোনো চুক্তি মেনে নেবেন না।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ফ্রান্স হুমকি দিয়েছে যে, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তবে তারা জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করবে। এছাড়া, চীন ও রাশিয়া ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আইএইএ-এর সঙ্গে আলোচনা করেছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
যদিও আলোচনা স্থগিত হয়েছে, তবে উভয় পক্ষই চুক্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি। ইরান ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়, এবং যুক্তরাষ্ট্রও একটি কঠোর ও কার্যকর চুক্তির পক্ষে। তবে, পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা এই প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে।
ভিডিও প্রতিবেদন
আলোচনার স্থগিতকরণ ও সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন:
উপসংহার:
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনা ২০২৫ সালে নতুন করে শুরু হলেও, বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়, পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণে এটি জটিল হয়ে উঠেছে। যদিও উভয় পক্ষই একটি চুক্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি, তবে ভবিষ্যতে এই আলোচনা কতটা সফল হবে তা সময়ই বলে দেবে।
0 Comments