ভূমিকা
বাংলাদেশের আবহাওয়া গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত গরম ও আর্দ্র হয়ে পড়ে। এই সময়ে শরীর ঘামে বেশি, পানির চাহিদা বাড়ে এবং হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই গ্রীষ্মকালে খাবারের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া জরুরি। এমন কিছু খাবার বেছে নেওয়া উচিত যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে, পানিশূন্যতা দূর করে এবং সহজে হজম হয়। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হলো গরমে কী কী খাবার খাওয়া উচিত, তার উপকারিতা এবং কীভাবে সেগুলো আপনার শরীর ও স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
গ্রীষ্মকালীন খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব
গ্রীষ্মে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি, লবণ ও খনিজ পদার্থ বেরিয়ে যায়। যদি তা পূরণ না করা হয়, তাহলে ডিহাইড্রেশন, হিটস্ট্রোক, ক্লান্তি, মাথাব্যথা এমনকি জ্বরও হতে পারে। এই সময়ে হালকা, ঠাণ্ডা ও সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
গরমে খাওয়া উচিত এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাবার
পানি ও পানিজাত খাবার
গ্রীষ্মে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হলো পানি। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। এছাড়া আপনি বিভিন্ন ফলের রস, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, তোকমা বীজ, আখের রস, ছাতুর শরবত ইত্যাদি খেতে পারেন। এগুলো শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে।
তরলজাত ফল
তরমুজ, বাঙ্গি, খিরসাপাত আম, আনারস, কমলা ইত্যাদি ফল গ্রীষ্মে খুব উপকারী। বিশেষ করে তরমুজে প্রায় ৯২% পানি থাকে যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া আনারসে এনজাইম থাকে যা হজমে সাহায্য করে।
সবুজ শাকসবজি
গ্রীষ্মকালে পালং শাক, লাউ, ধুন্দল, পুঁই শাক, মিষ্টি কুমড়া, কাকরোল ইত্যাদি সবজি খাওয়া উচিত। এইসব সবজিতে উচ্চমাত্রার পানি এবং ভিটামিন থাকে। লাউ ও ধুন্দল ঠাণ্ডা প্রকৃতির সবজি, যা শরীরের অতিরিক্ত গরম কমাতে সাহায্য করে।
দই ও ছানা
দই ঠান্ডা ও হজমযোগ্য। গরমে ঠান্ডা দই খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে এবং হজমের সমস্যা কমে। দইয়ের মধ্যে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ছানাও হালকা ও প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি খাবার।
চিঁড়া ও দুধ
চিঁড়া ভিজিয়ে ঠান্ডা দুধ, চিনি ও কলা দিয়ে খাওয়া গরমে একটি আদর্শ খাবার। এটি সহজপাচ্য, ঠাণ্ডা এবং শরীরের শক্তি যোগায়।
লেবুর শরবত
লেবুর শরবত ভিটামিন ‘সি’-সমৃদ্ধ একটি পানীয় যা ক্লান্তি দূর করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চাইলে এর সঙ্গে এক চিমটি লবণ ও চিনি মিশিয়ে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিঙ্ক তৈরি করতে পারেন।
ছাতু
ছাতু ও পানি বা দুধ দিয়ে তৈরি শরবত গ্রীষ্মে খুব উপকারী। এটি শরীরে দ্রুত শক্তি দেয় এবং ঠাণ্ডা রাখে। ছাতুতে প্রচুর ফাইবার থাকে যা হজমে সাহায্য করে।
কী কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত গরমে
গ্রীষ্মকালে কিছু খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন:
ঝাল ও মসলাদার খাবার: অতিরিক্ত ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়, হজমে সমস্যা করে ও অম্বলের সৃষ্টি করে।
তেলযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার গরমে হজম হয় না, গ্যাস্ট্রিক ও বমির সমস্যা হতে পারে।
পচা বা বাসি খাবার: গ্রীষ্মে খাবার খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই বাসি বা দীর্ঘক্ষণ ফ্রিজে রাখা খাবার খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
কোল্ড ড্রিঙ্ক ও কৃত্রিম পানীয়: এ জাতীয় পানীয় শরীর ঠাণ্ডা করলেও এর মধ্যে থাকা অতিরিক্ত চিনি ও কেমিক্যাল শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
কিছু বাড়তি টিপস
দিনে বারবার অল্প অল্প করে খেতে চেষ্টা করুন।
একসাথে ভারী খাবার না খেয়ে হালকা করে বার বার খাবেন।
রোদে বের হওয়ার আগে ঠাণ্ডা খাবার খান এবং সঙ্গে পানি বা শরবত রাখুন।
ঘাম বেশি হলে ওরস্যালাইন খেতে পারেন।
গরমে শিশুর খাদ্যাভ্যাস
শিশুদের খাবার নিয়েও গরমে সচেতন থাকতে হয়। তাদের বেশি পানি, ঠাণ্ডা দুধ, ফলমূল ও দই দেওয়া উচিত। চিপস, চকলেট বা ফাস্ট ফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো।
উপসংহার
গ্রীষ্মকাল আমাদের শরীরের জন্য একধরনের চ্যালেঞ্জ। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করলে আমরা এই চ্যালেঞ্জকে সহজেই মোকাবিলা করতে পারি। প্রাকৃতিক খাবার, হালকা ও পানিযুক্ত খাবার আমাদের শরীর ঠাণ্ডা রাখে এবং গ্রীষ্মকালীন অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে। গরমে সুস্থ থাকতে হলে শুধু খাবার নয়, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাও জরুরি।
0 Comments