Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা: রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ বাড়ছে

 


বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন সব সময়ই উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দু। তবে ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তা অভূতপূর্ব। ক্ষমতাসীন সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচি ঘোষণা করা হয়নি। এই অনিশ্চয়তা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দুশ্চিন্তা ও চাপ সৃষ্টি করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে যে আশাবাদ জন্মেছিল, তা ক্রমেই সন্দেহে পরিণত হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনী উত্তাপ, উদ্বেগ এবং নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছে ২০২৫ সাল।


 অনিশ্চয়তার মূল কারণ

নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার বলেছেন, নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষ ভাগে বা ২০২৬ সালের শুরুর দিকে হতে পারে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচন চায়।

এমন পরিস্থিতিতে কিছু মূল কারণ তুলে ধরা যায়:

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির ঘাটতি

ভোটার তালিকা ও সীমানা পুনর্নির্ধারণে ধীর গতি

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অপেক্ষা

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব


 দলগুলোর অবস্থান

বিএনপি:

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে অনড়। তারা বলছে, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। তারা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে গণআন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ:

আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালে ক্ষমতা হারানোর পর পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে। তারা বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হলে নিরপেক্ষ প্রশাসন ও বাস্তবসম্মত সময়সূচি প্রয়োজন। তারা ইউনূসের সরকারের ওপর আস্থা প্রকাশ করলেও দ্রুত নির্বাচন চায়।




বাম জোট ও বিকল্প দলসমূহ:

বামপন্থী দলগুলো এবং নতুন গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি দ্রুত নির্বাচন এবং রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি জানাচ্ছে। তারা বলছে, বিলম্ব মানেই আবারও অনিশ্চয়তার দ্বার খুলে দেওয়া।

ইসলামী দলগুলো:

হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী দলগুলো নিজেদের রাজনৈতিক দাবি (যেমন নারীর অধিকার কমিশন বিলুপ্তি, ইসলামবিরোধী নীতির বাতিল) নিয়ে সরব হলেও নির্বাচনের বিষয়ে এখনো একক অবস্থান নেয়নি।


 আন্তর্জাতিক চাপ ও পর্যবেক্ষণ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ সহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত সাফ জানিয়েছেন যে, “নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হবে, তবে কবে হবে সে বিষয়ে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই।”

তবে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারে—এমন আশঙ্কাও উঠছে।


 রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনীতিতে প্রভাব

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা শুধু রাজনীতিকেই নয়, অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ব্যবসায়ী মহলে বিনিয়োগের অনিচ্ছা, বাজারে অস্থিরতা ও জনমনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসে, তাহলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৩.৩০%–এ নেমে আসতে পারে। এটি কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য হ্রাস এবং রপ্তানি খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।


 রাজপথে সক্রিয়তা

দলগুলো এখন রাজপথে সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে। বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি যৌথভাবে বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করেছে। আওয়ামী লীগও মাঠে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। ছাত্র সংগঠনগুলো আবারো আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি নির্বাচন নিয়ে শীঘ্রই সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসে, তাহলে “রাজপথই আবার উত্তপ্ত হতে পারে।”


 নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব এখন দুই ভাগে বিভক্ত:

প্রশাসনিক প্রস্তুতি: ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ইভিএম প্রস্তুতি, সীমানা নির্ধারণ।

রাজনৈতিক সংলাপ: দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে একটি গ্রহণযোগ্য সময়সূচি নির্ধারণ।

কমিশনের কিছু কর্মকাণ্ড ইতিবাচক হলেও নির্দিষ্টতার অভাব রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়াচ্ছে।


 সম্ভাব্য সমাধান কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

সম্মিলিত রাজনৈতিক সংলাপের আয়োজন

নির্বাচন কমিশনের সময়সূচি ঘোষণার চাপ

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিশ্চিত করা

রাজনৈতিক সহিংসতা ও সহিংস ভাষার অবসান

 উপসংহার

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক ক্রান্তিকালে অবস্থান করছে। নির্বাচন নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তা দেশের গণতন্ত্র, অর্থনীতি এবং সামাজিক স্থিতির ওপর একটি বড় ধাক্কা হতে পারে। দলগুলো যদি সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে আবারও রাজনৈতিক বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠবে।

এখনই সময়, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়।

Post a Comment

0 Comments