Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

প্রখ্যাত অভিনেতা মুকুল দেবের মৃত্যু: বলিউডে শোকের ছায়া

 


ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা, মডেল এবং প্রাক্তন পাইলট মুকুল দেব ২৩ মে ২০২৫ তারিখে দিল্লির একটি হাসপাতালে ৫৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর খবর শোনার পর বলিউড সহ গোটা ভারতীয় বিনোদন জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বহু দশক ধরে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং ওয়েব প্ল্যাটফর্মে কাজ করে তিনি নিজেকে এক শক্তিশালী এবং বহুমাত্রিক অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।


 অভিনয় জীবনের শুরু

মুকুল দেব ১৯৯৬ সালে ‘দাস্তান’ নামক একটি টেলিভিশন সিরিজের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। এরপর তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রে পা রাখেন এবং ‘দিল্লি হাইটস’, ‘যমলা পাগলা দিওয়ানা’, ‘সন অফ সর্দার’, ‘জয় হো’ সহ একাধিক জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি তেলেগু, পাঞ্জাবি, কন্নড়, তামিল ভাষার চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন এবং আঞ্চলিক সিনেমায় ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।


পাইলট থেকে অভিনেতা

অভিনয়ে আসার আগে মুকুল দেব ছিলেন একজন পাইলট। তিনি ভারতের সরকারি বেসামরিক বিমানচালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Indira Gandhi Institute of Aeronautics) থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তার মধ্যে অভিনয়ের প্রতি গভীর আকর্ষণ তৈরি হলে, তিনি অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নেন।


 টেলিভিশনে সাফল্য

টেলিভিশনেও তার দাপট ছিল লক্ষণীয়। তিনি বিভিন্ন ক্রাইম শো ও ড্রামা সিরিজে কাজ করেছেন। স্টার প্লাস-এর ‘কহানি ঘর ঘর কি’, ‘কিস দেশ মে হে মেরা দিল’, ‘২১ সরফরোশ – সারাগারি ১৮৯৭’ – এসব ধারাবাহিকে তিনি অত্যন্ত প্রশংসিত হন। তার গম্ভীর ও বাস্তবভিত্তিক অভিনয় দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যেত।


 মৃত্যুর কারণ ও পারিপার্শ্বিকতা

তার মৃত্যু অত্যন্ত আকস্মিক হলেও, পরবর্তীতে জানা যায় যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন। তার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অভিনেতা বিন্দু দারা সিং এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “মুকুল তার মায়ের মৃত্যুর পর থেকে খুব ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি নিজের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যের কোনো যত্ন নিচ্ছিলেন না। সেই অবহেলাই সম্ভবত তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তিনি দিল্লির একটি হাসপাতালে ৮-১০ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন, যেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও শেষরক্ষা হয়নি।


 বলিউডের প্রতিক্রিয়া

মুকুল দেবের মৃত্যুর খবরে বলিউড অঙ্গন শোকাহত। অনেক বিখ্যাত অভিনেতা, নির্মাতা ও সহকর্মীরা তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

সালমান খান, যিনি মুকুলের সঙ্গে ‘জয় হো’ ছবিতে কাজ করেছিলেন, ইনস্টাগ্রামে একটি অদেখা ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, “Rest in peace, brother. You were too good, too soon.”

সোনু সুদ লিখেছেন, “An amazing human and a dear friend. Gone too soon.”

মনোজ বাজপেয়ী, কঙ্গনা রানাউত, সুষমিতা সেন সহ আরও অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।


শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্টে অন্ধকারের ইঙ্গিত

তার মৃত্যুর পর আরও একটি বিষয় আলোচনায় আসে — তার শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্ট। তিনি বিমানের ককপিট থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন, যার ক্যাপশনে লেখা ছিল:

“And if your head explodes with dark forebodings too...
I'll see you on the dark side of the moon.”

এই পোস্টটি তার মানসিক অবস্থার একটি প্রতিচ্ছবি হিসেবেই অনেকেই দেখছেন।


 অবদান ও স্মরণীয়তা

মুকুল দেবের মতো প্রতিভাবান শিল্পী শুধু সিনেমা বা টিভিতে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত, মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, এবং একজন অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তার বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রতিভা ও নম্র আচরণ সকলের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল।



 তার শূন্যতা

তার চলে যাওয়ায় শুধু একটি অভিনয়শিল্প নয়, এক মানবিক ব্যক্তিত্বকেও হারালো বলিউড। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি কোনো গ্ল্যামারের মোহে নয়, বরং বাস্তববাদী চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সেই মুকুল দেব এখন আর নেই — কিন্তু তার কাজ ও ব্যক্তিত্ব চিরদিন দর্শকের মনে বেঁচে থাকবে।


 উপসংহার

মুকুল দেবের মৃত্যু একটি বড় ক্ষতি ভারতীয় বিনোদন জগতের জন্য। তার অসমাপ্ত স্বপ্ন, অপ্রকাশিত চিত্রনাট্য এবং অগণিত অনুরাগীর মন ভেঙে দিয়েছে। তবে তার অভিনীত চরিত্র ও জীবনদর্শন ভবিষ্যতের অভিনেতা ও স্রষ্টাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

Post a Comment

0 Comments