Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

হেফাজতে ইসলামের ১২ দফা দাবি: নারী অধিকার কমিশন বিলুপ্তির আহ্বান ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া


 ২০২৫ সালের ৩ মে, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি মহাসমাবেশের মাধ্যমে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করে। এই দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও এর প্রতিবেদন বাতিলের আহ্বান। হেফাজতের নেতৃবৃন্দ এই কমিশনের সুপারিশগুলোকে "আল-কোরআনের পরিপন্থী" বলে অভিহিত করেন এবং কমিশনটি বিলুপ্তির দাবি জানান। 

 হেফাজতের ১২ দফা দাবি

হেফাজতে ইসলামের ঘোষিত ১২ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও এর প্রতিবেদন বাতিল করা।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন ও বহুত্ববাদ বাদ দেওয়া।

শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যার বিচারে ট্রাইব্যুনালের গতি আনা এবং নির্বাচনের আগে বিচার সম্পন্ন করা।

চট্টগ্রামে উগ্র হিন্দুত্ববাদের হাতে নিহত সাইফুলের হত্যাকারীদের বিচার করা।

শেখ হাসিনার আমলে দায়ের করা সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার ও যারা গুম-খুন করেছে তাদের বিচার করা।

গাজায় হামলা নিয়ে সরকারের অবস্থান ও ভূমিকা স্পষ্ট করা।

প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।

মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা।

পার্বত্য অঞ্চলে ভিনদেশিদের কার্যক্রম বন্ধ করা।

কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা।

ধর্মীয় অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন কর

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন নিয়ে আপত্তি

হেফাজতের নেতৃবৃন্দ নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোকে "আল-কোরআনের পরিপন্থী" বলে অভিহিত করেন। তারা দাবি করেন, এই কমিশনের সুপারিশগুলো ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে অবজ্ঞা করে এবং পশ্চিমা মূল্যবোধ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা কমিশনটি বিলুপ্ত করে আলেম ও ধর্মপ্রাণ নারীদের নিয়ে নতুন কমিশন গঠনের আহ্বান জানান।


 

নেতৃবৃন্দের বক্তব্য

সমাবেশে হেফাজতের নায়েবে আমীর মাওলানা মাহফুজুল হক ১২ দফা দাবির ঘোষণা পাঠ করেন। হেফাজতের আমীর মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে "আল-কোরআনের পরিপন্থী" বলে অভিহিত করেন এবং কমিশনটি বাতিলের দাবি জানান। তিনি বলেন, "কোনোভাবেই আমরা কোরআন ও সুন্নাহর বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি না।" 


 ভবিষ্যৎ কর্মসূচি

হেফাজতে ইসলাম ঘোষণা করেছে যে, যদি তাদের দাবিগুলো পূরণ না হয়, তবে আগামী ২৩ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া, আগামী তিন মাসের মধ্যে নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভাগীয় সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

হেফাজতে ইসলামের এই দাবিগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, হেফাজতের এই দাবিগুলো দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও নারীর অধিকার নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।


 উপসংহার

হেফাজতে ইসলামের ১২ দফা দাবি, বিশেষ করে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বিলুপ্তির আহ্বান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে। এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন বা প্রত্যাখ্যান দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

Post a Comment

0 Comments