Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার প্রস্তুতি: রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ

 


ভূমিকা

বাংলাদেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হতে যাচ্ছে ২০২৫ সালের মে মাস। দীর্ঘদিন বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকার পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ও আলোচনা সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার এই প্রত্যাবর্তন শুধু বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা আলোচনা করব খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার প্রক্রিয়া, এর রাজনৈতিক তাৎপর্য, সম্ভাব্য প্রভাব এবং সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া।


বিদেশে অবস্থান ও চিকিৎসা

খালেদা জিয়া ২০২১ সালের পর থেকে গুরুতর অসুস্থতার কারণে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তার লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি উঠে বিএনপির পক্ষ থেকে। সরকার প্রাথমিকভাবে তা মঞ্জুর করেনি, তবে পরে মানবিক বিবেচনায় তার চিকিৎসা শর্তসাপেক্ষে ঢাকার বাইরে বিদেশি ডাক্তারদের পরামর্শে সীমিত চিকিৎসা করা হয়।

২০২4 সালের শেষ দিকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় খালেদা জিয়াকে কাতারে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে কাতার আমিরের অনুমোদন ও সহায়তায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে তার চিকিৎসা চলে। তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে চিকিৎসকরা তাকে দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন।



ফেরার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা

২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন। বিএনপি নেতৃত্ব জানিয়েছে, ৬ মে তারিখে কাতার থেকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হবে। দলটি তার এই প্রত্যাবর্তনকে একটি “ঐতিহাসিক মুহূর্ত” বলে ঘোষণা করেছে।

ফেরার দিন ঢাকায় তাকে বরণ করতে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী প্রস্তুত রয়েছে। বিএনপি তার কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন টানিয়েছে। অনেকে এটিকে “রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার পুনর্জাগরণ” হিসেবে দেখছেন। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত একটি “প্রতীকী মিছিল” করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যদিও পুলিশের অনুমতির বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত।


রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপির নেতারা বলছেন, “খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নতুন প্রেরণা যোগাবে।” দলটি মনে করছে, তার উপস্থিতিতে দল আরো সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় হবে। এছাড়া আসন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তার নেতৃত্ব কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারে।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করা না হলেও দলটির নেতারা ঘনিষ্ঠ মহলে বিষয়টিকে “রাজনৈতিক নাটক” বলে উল্লেখ করছেন। আওয়ামী লীগের অনেকে মনে করছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে না, বরং এটি একটি “সহানুভূতিমূলক কৌশল” মাত্র।


জনগণের প্রতিক্রিয়া

সাধারণ জনগণের মাঝে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিএনপির সমর্থকরা একে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে এবং অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। তবে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছে যে, তার শারীরিক অবস্থা কি তাকে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে দেবে কিনা।

বিভিন্ন শহরে ছোট পরিসরে মিছিল, প্রার্থনা সভা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তার সুস্থতা ও নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য। দেশের রাজনৈতিক সচেতন নাগরিকরা বলছেন, তার ফিরে আসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলেও, দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা যেন বিঘ্নিত না হয়, সেটিও বিবেচনায় রাখা জরুরি।


নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি

খালেদা জিয়ার আগমনের দিন রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে বলে জানা গেছে। বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র‍্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। গুলশান এলাকাতেও সিসিটিভি তদারকি ও যান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিএনপিকে “সমাবেশ ও শোভাযাত্রা থেকে বিরত থাকার” অনুরোধ জানানো হবে। তবে বিএনপি বলেছে, তাদের সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং সংবিধান অনুযায়ী হবে।


ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিণতি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন একদিকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংহতি শক্তিশালী করবে, অন্যদিকে সরকারকে নতুন করে রাজনৈতিক চাপের মধ্যে ফেলতে পারে। বিশেষ করে তার উপস্থিতি দলীয় সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করতে সাহায্য করবে, যা বিগত কয়েক বছর ধরে অনুপস্থিত ছিল।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, খালেদা জিয়া নিজে কতটা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে পারবেন। তার স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনায় অনেকেই মনে করেন, তিনি হয়তো সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নেবেন না, তবে “প্রতীকী নেত্রী” হিসেবে তার উপস্থিতি দলের জন্য সহানুভূতির ভিত্তি গড়বে।


উপসংহার

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ঘটনাটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি উল্লেখযোগ্য মোড়। একদিকে এটি বিএনপিকে রাজনীতিতে পুনঃস্থাপিত করতে পারে, অন্যদিকে সরকারের ওপর একটি গণতান্ত্রিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তার ফিরে আসার পর দেশের রাজনীতির গতিপথ কোন দিকে মোড় নেবে, সেটি সময়ই বলবে। তবে এটুকু নিশ্চিত যে, ২০২৫ সালের রাজনীতি তার আগমনের ফলে নতুন একটি অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments