স্টারডাম নয়, হৃদয়ের বিনয় নিয়েই আজও চলেন প্রসেনজিৎ
টালিউডের বর্ষীয়ান ও কিংবদন্তি অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়—এক নামেই চেনেন সবাই। তিনি শুধু একজন সুপারস্টার নন, বরং শিল্পীসত্তার এক অনন্য প্রতীক, যিনি তার জীবনের শুরুটা শুরু করেছিলেন চরম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা শোনালেন তাঁর জীবনের সেই না-জানা অধ্যায়, যেটা অনেকেই জানেন না—“তখন ঠিক সময়ে খেতামও না!”
শুরুর দিনগুলো ছিল কঠিন
সাতের দশকের শেষে অভিনয়ে পা রাখলেও আশির দশকে তাঁর ক্যারিয়ার গতি পায়। কিন্তু তখনকার দিনগুলো সহজ ছিল না। নাম, খ্যাতি, সম্মান—এসব তখন ছিল অনেক দূরের স্বপ্ন।
প্রসেনজিৎ বলেন,
“তখন খাওয়া ঠিক মতো হতো না। সময়মতো লাঞ্চ পাওয়া যেত না। পকেটে টাকা না থাকলে কেউ বুঝত না, আমিও কিছু বলতাম না।”
তাঁর পাশে তখন যিনি ছিলেন, তিনি ছিলেন স্টুডিওর বাইরের একজন চা-দোকানি। সেই মানুষটি প্রতিদিন নিজের খাবার নিয়ে আসতেন, আর তার এক অংশ ভাগ করে নিতেন তরুণ প্রসেনজিতের সঙ্গে। সেই একেকটি লুচি, এক কাপ চা বা ডাল-ভাত—তাঁর কাছে তখন আশীর্বাদ স্বরূপ ছিল।
স্টারডাম কখনো মাথায় ওঠেনি
আজ তিনি টালিউডের সবচেয়ে সফল ও সম্মানিত অভিনেতাদের একজন। তবে নিজেকে “স্টার” ভাবেন না বলেই তিনি এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,
“স্টারডাম কখনো মাথায় ওঠেনি। কারণ আমি জানি, কে আমাকে একদিন খাবার শেয়ার করে দিয়েছিল। আমি জানি, স্টার হবার আগেও আমি মানুষ ছিলাম।”
এই কথার মধ্যেই মিশে আছে বিনয়, মাটির সঙ্গে থাকা মানসিকতা এবং আত্মসচেতনতা। তারকা হয়েও যারা মানুষের মতো থাকতে পারেন, প্রসেনজিৎ তাদের অন্যতম উদাহরণ।
মানবিক ও শিল্পীসত্তার একত্র সমন্বয়
প্রসেনজিৎ কেবল অভিনেতা নন, প্রযোজক হিসেবেও টালিউডে দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁর প্রতিটি সাক্ষাৎকারে বারবার উঠে আসে নিজের অতীতের কষ্ট, শিক্ষা ও স্বপ্নভঙ্গের গল্প।
তিনি বারবার বলেন,
“যদি কষ্ট না পেতাম, তাহলে এতটা তৈরি হতে পারতাম না। এখনকার নবাগতদের বলি—কষ্টকে ভয় পেও না। ওটাই তোমাকে শিখিয়ে দেবে কীভাবে বাঁচতে হয়।”
কাজের ধারাবাহিকতা ও পরিশ্রমের জয়
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কর্মজীবন ৪ দশকের বেশি সময় ধরে বিস্তৃত। তিনি ৩৫০+ সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং প্রতিটিতেই নিজেকে ভেঙে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। ২০১০ সালের পর থেকে তিনি আর্ট ফিল্ম ও সমালোচকদের পছন্দের সিনেমায় অভিনয় করে আবারও নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
উপসংহার
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জীবন আমাদের শেখায়—বিনয়, কৃতজ্ঞতা আর পরিশ্রম একত্রে থাকলে স্টারডাম নয়, মানুষের মন জয় করা যায়। আজ তিনি একজন সুপারস্টার হয়েও মনে রাখেন, কে একদিন তার সঙ্গে একমুঠো খাবার ভাগ করে নিয়েছিল। সেটাই তাকে সবার থেকে আলাদা করে তোলে।
0 Comments