Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসছে পাকিস্তান, প্রাথমিক সূচি চূড়ান্ত


আন্তর্জাতিক ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য দারুণ এক খবর—জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে আসছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল গুঞ্জন, আলোচনা এবং প্রস্তুতি। অবশেষে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের আলোচনার পর প্রাথমিক সূচি চূড়ান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) যৌথভাবে প্রস্তাবিত সূচিটি চূড়ান্ত করেছে, এবং এখন চলছে আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের অপেক্ষা।

এই সফর নিয়ে দুই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে রয়েছে বিপুল আগ্রহ। কারণ, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা, আবেগ ও ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা।


সূচির প্রাথমিক খসড়া: ম্যাচ ও ভেন্যু

পাকিস্তানের প্রস্তাবিত সফরে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টেস্ট ম্যাচ। এছাড়া একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথাও রয়েছে সফরের শুরুতে। প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী সফরটি ২০২৫ সালের ১৫ জুলাই থেকে শুরু হয়ে চলবে ৬ আগস্ট পর্যন্ত।

প্রস্তাবিত সূচি (প্রাথমিক):

  • ১৪ জুলাই: পাকিস্তান দলের বাংলাদেশ আগমন

  • ১৬ জুলাই: একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ (স্থল: বিকেএসপি)

  • 18 জুলাই: ১ম ওয়ানডে – শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, ঢাকা

  • 21 জুলাই: ২য় ওয়ানডে – চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়াম

  • 24 জুলাই: ৩য় ওয়ানডে – সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম

  • 28 জুলাই - 1 আগস্ট: ১ম টেস্ট – জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম

  • 3-7 আগস্ট: ২য় টেস্ট – মিরপুর, ঢাকা

এই সূচি এখনও চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে এবং নিরাপত্তা ও মাঠ প্রস্তুতির কাজ দ্রুতই শুরু হবে।


সফরের তাৎপর্য ও প্রত্যাশা

এই সিরিজটি শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নয়, বরং এটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দুটি টেস্ট ম্যাচ থেকেই পয়েন্ট অর্জনের সুযোগ থাকবে দুই দলের জন্যই।

এছাড়া ওয়ানডে সিরিজটিও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২০২5 সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতির জন্য এটি দুদলের জন্যই ‘ড্রেস রিহার্সাল’। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, উপমহাদেশের দুই দল যখন মুখোমুখি হয়, তখন ম্যাচগুলো হয়ে ওঠে উত্তেজনায় ঠাসা।


বাংলাদেশ দল প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত

বাংলাদেশ দলের নতুন কোচিং স্টাফ ও তরুণ স্কোয়াড নিয়ে বিসিবি এই সিরিজকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, তাওহীদ হৃদয়, নাসুম আহমেদ এবং তরুণ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজকে ঘিরে প্রস্তুত হচ্ছে দল।

এই সিরিজে সম্ভবত বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা যাবে বাংলাদেশের দলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করা কয়েকজন খেলোয়াড় যেমন: মুশফিক হাসান, নাইম শেখ, ও আরাফাত সানি জুনিয়রের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।

সিরিজের আগে বাংলাদেশ 'এ' দল ও হাই-পারফরম্যান্স ইউনিটের সদস্যদের নিয়ে একটি ক্যাম্প আয়োজনের পরিকল্পনা করছে বিসিবি।


পাকিস্তান দলও আসছে পূর্ণশক্তির স্কোয়াড নিয়ে

পাকিস্তানও সিরিজটি ঘিরে বড় পরিকল্পনা করছে। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহিন আফ্রিদি, ও হাসান আলীদের মতো অভিজ্ঞ তারকারা সফরে আসবেন বলে জানা গেছে। এই সিরিজটি পাকিস্তানের নতুন নির্বাচক কমিটির অধীনে প্রথম বিদেশ সফর হবে।

পিসিবির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “বাংলাদেশ সফরটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতীক নয়, বরং একটি কৌশলগত ক্রিকেট টার্গেটের অংশ।”


নিরাপত্তা ও মাঠ প্রস্তুতির গুরুত্ব

এমন একটি আন্তর্জাতিক সিরিজ আয়োজনে মাঠ ও নিরাপত্তা অন্যতম বিষয়। বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি পূর্ণ নিরাপত্তা বলয় গঠন করা হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া দর্শকদের জন্য থাকবে অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা, যেখান থেকে আগেভাগেই টিকিট কিনতে পারবেন ভক্তরা।

স্টেডিয়ামের প্রস্তুতি এবং পিচ কন্ডিশনের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। গ্রাউন্ডসম্যানদের টিম ১ মাস আগে থেকেই মাঠ প্রস্তুতির দায়িত্বে রয়েছে।


ভক্তদের উত্তেজনা ও টিকিট নিয়ে আগ্রহ

বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই ভক্তদের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিরিজটি নিয়ে শুরু হয়ে গেছে আলোচনা। অনেকেই স্টেডিয়ামে খেলা দেখার পরিকল্পনা করছেন। বিসিবি জানিয়েছে, এবারের সিরিজে দর্শক প্রবেশের বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না।

এছাড়া একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সিরিজের প্রতিটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে, যাতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে দর্শকরা উপভোগ করতে পারেন।


উপসংহার: ক্রিকেটের বন্ধুত্ব ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা

এই বাংলাদেশ সফর পাকিস্তানের জন্য যেমন প্রতিযোগিতার মঞ্চ, তেমনি বাংলাদেশের জন্য আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার বড় সুযোগ। দুই দেশের ক্রিকেটীয় বন্ধুত্বের সম্পর্ক যেমন আছে, তেমনি মাঠের প্রতিযোগিতায় কারও ছাড় নেই।

দুই দলই তাদের সেরা ফর্মে ফিরতে চায় এবং এই সিরিজ সেই লক্ষ্যে এক বড় ধাপ হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট ফেরার এই উদ্যোগ ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য আনন্দের বার্তা। এখন শুধু অপেক্ষা ১৫ জুলাইয়ের, যখন সব প্রস্তুতি পেরিয়ে মাঠে গড়াবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই।


Post a Comment

0 Comments