দিনভর মেঘে ঢাকা আকাশ, ঢাকায় হতে পারে বৃষ্টিপাত
আজ রাজধানী ঢাকার আকাশ সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন থাকবে এবং এর মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভোর থেকে শুরু হওয়া মেঘের আনাগোনা দুপুর পেরিয়েও থামছে না, এবং এ পরিস্থিতি সারা দিন অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।
ঢাকার বাসিন্দারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখেছেন যে, আকাশ ঢেকে গেছে সাদা-কালো মেঘে, সঙ্গে মৃদু বাতাস। সকাল ৬টার পরপরই অনেক এলাকায় হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে আজকের দিনটি অনেকটা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার মধ্যে কেটে যেতে পারে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প পূর্ণ বাতাস বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেড়েছে।
সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বর্ষাকাল বিরাজ করে এবং এ সময়টায় আবহাওয়ায় হঠাৎ পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা থাকে। আবহাওয়াবিদরা বলেন, মৌসুমি বাতাসের সক্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় আগামী কয়েক দিন এ ধরনের মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া এবং বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। তারা সতর্ক করে জানিয়েছেন, বৃষ্টি হলেও তা খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী না-ও হতে পারে, তবে বারবার থেমে থেমে নামতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদরা আরও জানান, বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে অনেক জায়গায় হালকা বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে, যা বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার জন্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সেই সঙ্গে নদী এবং জলাশয়গুলোতে পানির স্তর বাড়তে শুরু করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময়ে কৃষি খাতও বৃষ্টির সুবিধা পায়, তবে অনেক অঞ্চলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। জলাবদ্ধতা এড়াতে নগরবাসীকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে এবং প্রয়োজন ছাড়া অযথা বাইরে বের না হওয়াই ভালো।
আজকের আবহাওয়ার এ পরিস্থিতি দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। ঢাকার অনেক রাস্তায় সকালে যানবাহনের চাপ থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা তুলনামূলক কম দেখা গেছে। বিশেষ করে অফিসগামী মানুষরা ছাতা, রেইনকোট সঙ্গে নিয়েই বের হয়েছেন। অনেক অভিভাবকই বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর আগে আবহাওয়া দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাইরে হালকা বাতাসের সঙ্গে শীতল আবহাওয়া অনেকের কাছে স্বস্তিকর মনে হলেও, জলাবদ্ধতা এবং ভেজা রাস্তায় যাতায়াত অনেকের জন্য ভোগান্তি বাড়িয়েছে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন জেলার আবহাওয়ায়ও একই ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং বরিশাল বিভাগের অনেক এলাকায় হালকা থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সম্ভাবনা থাকায় সেসব অঞ্চলে প্রশাসনকে সর্তক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, বৃষ্টির এ ধারাবাহিকতা শস্যক্ষেত্র এবং কৃষিজমিতে নতুন প্রাণসঞ্চারের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ধান, পাট এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়াবিদরা আশা করছেন, এ বৃষ্টির ফলে পানির চাহিদা পূরণ হওয়ায় ফসল ভালো হবে এবং খাদ্য উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তবে, জলাবদ্ধতা ও যানজটের শঙ্কায় ঢাকার নগরবাসীকে সচেতন থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পানি জমা ঠেকাতে সিটি করপোরেশনগুলো বিভিন্ন খাল, নালা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিষ্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং যানবাহন বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা মাথায় রেখে নাগরিকদের সতর্ক থাকা দরকার।
এছাড়াও, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আবহাওয়ায় কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। যদি মৌসুমি বায়ুর প্রভাব কমে যায়, তবে রাজধানীসহ সারা দেশে আবারও স্বাভাবিক রোদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেতে পারে। কিন্তু আপাতত আবহাওয়া পরিস্থিতি যা ইঙ্গিত দিচ্ছে তা হলো, আগামী এক-দুই দিন ঢাকার আকাশ মেঘে ঢাকা এবং বৃষ্টি হতে পারে।
পরিশেষে, রাজধানীর নাগরিকরা যেন আবহাওয়ার এ পরিবর্তনকে মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেন। ছাতা, রেইনকোট সঙ্গে রাখা এবং যাত্রাপথ পরিকল্পনা করে বাইরে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে নতুন নতুন পূর্বাভাস দেবে, যা মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
সবমিলিয়ে, মেঘাচ্ছন্ন ঢাকার আজকের আবহাওয়া স্বাভাবিক জীবনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটালেও এর সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্যও ফুটে উঠেছে। চারপাশে ভেজা পাতা, ঠান্ডা বাতাস, এবং বৃষ্টিসিক্ত নগরীর চিরচেনা রূপ যেন এক ভিন্ন আবহ এনে দেয়, যা অনেকের কাছে এক প্রশান্তির অনুভূতি এনে দেয়।
0 Comments