ঢাকার আশুলিয়ায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছয়জনের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ২৩ মার্চ ২০২৫ তারিখে সাংবাদিকদের জানান, এই মামলার তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (চার্জ) দাখিলের প্রস্তুতি চলছে। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া প্রথম মামলার তদন্ত সমাপ্তি।
ঘটনার বিবরণ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশ ও স্থানীয় এমপি সাইফুল ইসলাম ও তার ক্যাডার বাহিনী ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিতে অন্তত ৩১ জন নিহত হন। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১৫ জন মারা যান। এছাড়া, গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল দেড় হাজারের বেশি মানুষ, যাদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা গুলিবিদ্ধ মরদেহ একটি ভ্যানে তুলে আশুলিয়া থানার সামনে নিয়ে গিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ভিডিওতে স্থানীয় ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী আবুল হোসেনের পোস্টার দেখা যায়, যা ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার আশপাশে নিশ্চিত করে।
তদন্ত ও আসামিরা
এই ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়, যা অভিন্ন হওয়ায় একটি মামলায় পরিণত হয়। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তাদের মধ্যে সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিদুল ইসলাম, তৎকালীন ওসি এ এফ এম সায়েদ, ডিবি পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক ও কনস্টেবল মুকুল গ্রেফতার হয়েছেন। সাইফুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।
বিচারপ্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঈদের পর আরও ৩৪টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থাকবে। বিচারপ্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। এটি গণআদালতের বিচার নয়, সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর মধ্যেই করতে হয়। মাত্র ৫-৬ মাসের মধ্যে এমন জটিল অপরাধের তদন্ত করা সহজ নয়। তবুও আমরা দ্রুততম সময়ে মানসম্মত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।”
এই মামলার তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
0 Comments