Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

মুক্তিপণ না দেওয়ায় শিশুকে হত্যা করে খালে নিক্ষেপ


মুক্তিপণ না দেওয়ায় শিশুকে হত্যা করে খালে নিক্ষেপ: টেকনাফে নৃশংস অপরাধ

কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ও নৃশংস ঘটনা, যেখানে মুক্তিপণ দিতে না পারায় এক ৭ বছরের শিশুকে অপহরণ করে হত্যা করে খালে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃজন হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে টেকনাফের ২৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক সি/৫-এ, যেখানে মো. আব্দুল্লাহ নামে শিশুটি পরিবারসহ বসবাস করতেন। ছোট্ট আব্দুল্লাহ স্কুলে যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে বের হয়েছিল, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে সে ফিরে আসেনি। পরিবার ও স্থানীয়রা তাকে খুঁজতে থাকে, কিন্তু কোথাও তার কোনো সন্ধান পাননি।

পরিবারের পক্ষ থেকে পরে জানা যায়, আব্দুল্লাহকে অপহরণ করা হয়েছে এবং অপহরণকারীরা মুক্তিপণ দাবি করেছেন। পরিবারের সদস্যরা বলেন, অপহরণকারীরা বড় অংকের মুক্তিপণ চেয়েছিল, যা পরিবার মেটাতে সক্ষম হয়নি। এ কারণে অপহরণকারীরা শিশুটিকে বাঁচানোর পরিবর্তে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীর পাশে একটি খালে ফেলে দেয়।

শিশুটির মরদেহ ২২ জুন সকালে টেকনাফের হ্নীলা-নুরালী পাড়া সংলগ্ন পাহাড়ি ছড়ার একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহত শিশুর মৃতদেহ দেখে এলাকাবাসী হতবাক এবং শোকস্তব্ধ। মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ তৎপর হয়ে উঠেছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের ধরতে অভিযান চালিয়ে আসছে।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

এ ধরনের নৃশংস ঘটনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ আশেপাশের এলাকার মানুষকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। স্থানীয় নেতারা ও মানবাধিকার কর্মীরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।


অপহরণ ও মুক্তিপণ চাওয়ার সামাজিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায়, বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশেপাশে শিশু অপহরণ ও মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনা সময়ে সময়ে ঘটে থাকে। সামাজিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জটিলতার কারণে এসব অপরাধ সহজেই সংঘটিত হয়। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালায়, তবে অপরাধীরা নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে তাদের অপরাধকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে।

এই ধরনের ঘটনা শিশুদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তাদের পরিবার ও সমাজের উপর একটি নরকীয় মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। নিরাপদ পরিবেশে শিশুদের বিকাশের জন্য সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও সামাজিক সংগঠনগুলোরও ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


মানবাধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্ন

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানুষের বসবাস থাকায় এখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জটিল। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করলেও, সীমিত সম্পদ ও রাজনৈতিক বাধার কারণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

শিশুদের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার রক্ষায় সরকার ও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য সুরক্ষা জোন তৈরি, সাইবার ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো ইত্যাদি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।

Post a Comment

0 Comments