Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদ আর নেই


 বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ও বিশিষ্ট ফ্যাশন এবং মডেল আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদ আর নেই। শুক্রবার রাতে, ২০ জুন ২০২৫, ঢাকার ধানমন্ডির ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। বাংলাদেশে আধুনিক ফ্যাশন এবং মডেল আলোকচিত্রের অন্যতম পায়োনিয়ার ছিলেন চঞ্চল মাহমুদ, যিনি ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন অসংখ্য তারকা এবং গ্ল্যামার জগতের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তাঁর আলোকচিত্র জীবন শুরু হয় দেশের খ্যাতনামা আলোকচিত্রাচার্য মঞ্জুর আলম বেগের হাত ধরে এবং এর পরে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি আলোকচিত্র শিল্পে তার স্বতন্ত্র স্থান করে নেন।

চঞ্চল মাহমুদ ছিলেন শুধুমাত্র একজন আলোকচিত্রীই নন, ছিলেন অনেকের অনুপ্রেরণা এবং শিক্ষকও। তার নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তৈরি হয়েছে অসংখ্য মেধাবী আলোকচিত্রী, যারা আজ দেশের মিডিয়া এবং বিনোদন শিল্পে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ফ্যাশন শো, বিজ্ঞাপন এবং শোবিজ তারকাদের পোর্ট্রেট থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাগাজিনের কভার — এমন অনেক ক্ষেত্রেই তার হাতের ছোঁয়া ছিল অনবদ্য। বাংলাদেশের আলোকচিত্রের ইতিহাসে তার একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, কারণ তিনিই প্রথম বাংলাদেশে মডেল আলোকচিত্রকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছিলেন এবং দেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে আলোকচিত্রের মাধ্যমে এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন।

চঞ্চল মাহমুদের ক্যামেরায় প্রথমবারের মতো ধরা দেন শাবনূর, মৌসুমি, সালমান শাহ, আফসানা মিমি, নোবেল, সোমি কায়সারসহ অনেক তারকা অভিনেতা এবং মডেলরা। তার ছবির মধ্যে একটি গল্প থাকত, একটি বিশেষ শৈলী থাকত, যা তাকে করেছে অনন্য। শুধু ছবি তোলাই নয়, আলোর খেলা, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং পোশাকের সমন্বয়ে তার ফ্রেমগুলো হতো যেন একটি শিল্পকর্ম। তার এই সৃষ্টিশীলতা তাকে আলোকচিত্রশিল্পীদের মধ্যে একটি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে এবং বাংলাদেশের আলোকচিত্রের ইতিহাসে তার নাম চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার স্বাস্থ্য খারাপ ছিল এবং তিনি হৃদরোগসহ একাধিক জটিল রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগে কয়েকবার হার্ট অ্যাটাকও হয়েছে এবং পরিবারের সদস্যরা তার চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার মরদেহ রাখা হবে এবং বাদ জোহর জানাজার পরে দক্ষিণ বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। চঞ্চল মাহমুদ রেখে গেছেন স্ত্রী রায়না মাহমুদ এবং এক কন্যাসন্তানসহ অসংখ্য ভক্ত, ছাত্র এবং শুভানুধ্যায়ী, যাদের চোখ আজ ভিজে গেছে তার চলে যাওয়ার খবরে।

চঞ্চল মাহমুদের মৃত্যু বাংলাদেশের শিল্প, মিডিয়া এবং সংস্কৃতি জগতে একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তার ক্যামেরা যেন কথা বলত, যেন ছবি নয়, একটি গল্প ফুটিয়ে তুলত। আলোকচিত্রের মাধ্যমে শিল্প এবং সৌন্দর্যের এক নতুন ভাষা তৈরি করেছিলেন তিনি। আজ তিনি শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে না থাকলেও তার কাজ, তার চিন্তা এবং তার সৃষ্টি আলোকচিত্রের ইতিহাসে উজ্জ্বলভাবে টিকে থাকবে। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি আগামী প্রজন্মের আলোকচিত্রীদের অনুপ্রাণিত করে যাবেন অনন্তকাল।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শান্তিতে পরলোক যাক তার আত্মা।

Post a Comment

0 Comments