হিজরি নববর্ষে পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফ (কিসওয়া) পরিবর্তন একটি প্রাচীন, তাৎপর্যপূর্ণ এবং পবিত্র ঐতিহ্য, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অসীম মর্যাদা এবং ভক্তির প্রতীক। আগামী ১ মুহাররম ১৪৪৭ হিজরি, অর্থাৎ বুধবার ২৫ জুন পবিত্র কাবা শরিফে নতুন গিলাফ পরানোর জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হচ্ছে মক্কায়। প্রতি বছর নির্দিষ্ট এই দিনে কাবা শরিফের পুরাতন গিলাফ সরিয়ে নতুন কিসওয়া পরানোর মাধ্যমে নতুন একটি ইসলামী বছরের শুভ সূচনা হয়।
কিং আব্দুলআজিজ কমপ্লেক্সে বছরের শুরু থেকেই নতুন কিসওয়া তৈরির কাজ চলে, যেখানে অভিজ্ঞ শিল্পী এবং কারিগররা অত্যন্ত দক্ষতা ও যত্নের সঙ্গে কাবা শরিফের জন্য বিশেষভাবে এই গিলাফ তৈরি করেন। প্রায় ১,০০০ কেজি বিশুদ্ধ কালো রেশম, ১২০ কেজি খাঁটি স্বর্ণ এবং প্রায় ১০০ কেজি রৌপ্যর সূতা দিয়ে অসংখ্য কুরআনিক আয়াত এবং আল্লাহর নাম সূক্ষ্মভাবে নকশা করে বোনা হয়। নতুন কিসওয়ায় খিলাফতের অনন্য ঐতিহ্য, নান্দনিকতা এবং ইসলামী শিল্পের উৎকৃষ্ট উদাহরণ ফুটিয়ে তোলা হয়।
পরিবর্তন অনুষ্ঠানে ১৫০ এর বেশি প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ, কারিগর এবং বিশেষজ্ঞ যুক্ত থাকেন। তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় পবিত্র কাবা শরিফের চারপাশে নতুন গিলাফটিকে সুন্দরভাবে পরিয়ে দেন। প্রথমে কিসওয়ার চারপাশের চারটি অংশ স্থাপন করে সেগুলো বিশেষভাবে আঁটসাঁট করা হয়, এরপর ধীরে ধীরে আগের কিসওয়া খুলে নেওয়া হয় এবং নতুনটিকে সম্পূর্ণভাবে সুন্দরভাবে বসিয়ে দেওয়া হয়। এ বছর প্রথমবারের মতো নারী কর্মীরাও এই পবিত্র কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন, যা একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত।
নতুন হিজরি বছরের শুরুতে কাবা শরিফের নতুন কিসওয়া পরানোর মধ্যে রয়েছে ইসলামের মহান ঐতিহ্য, ভ্রাতৃত্ব এবং নবায়নের বার্তা। পবিত্র মক্কায় আগত হাজারো হাজি এবং বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম এই মুহূর্তটিকে গভীর ভক্তি, আবেগ এবং শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। কাবা শরিফের নতুন গিলাফ যেন নতুন বছরের প্রতিটি মুহূর্তকে শান্তি, সুখ এবং সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ করে তোলে — এ প্রার্থনা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে অনুরণিত হয়। এই পবিত্র প্রথা ইসলামের সৌন্দর্য এবং এর শান্তিপূর্ণ বার্তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ, যা সারা বিশ্বের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করে এবং মহান আল্লাহর রহমতের আশীর্বাদে উজ্জ্বল নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
0 Comments