ভূমিকা
তরমুজ বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তরমুজের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কৃষক, পাইকারি ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের উপর প্রভাব ফেলেছে। এই প্রবন্ধে আমরা তরমুজের উৎপাদন, বাজার পরিস্থিতি, মূল্যবৃদ্ধির কারণ এবং এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি
২০২৫ সালে বাংলাদেশের তরমুজ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, খুলনা, গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজারসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে তরমুজ চাষের পরিমাণ বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গোপালগঞ্জে ১২.২৫ হেক্টর জমিতে অফ-সিজন তরমুজ চাষ হয়েছে, যেখানে ৯,০৭৭ টন উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ।
তবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও বাজারে সরবরাহের অসামঞ্জস্যতা এবং পরিবহন সমস্যার কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমান বাজার মূল্য
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, ঢাকার খুচরা বাজারে তরমুজের দাম প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে । পটুয়াখালী ও ভোলার পাইকারি বাজারে বড় আকারের তরমুজের দাম ১৭০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে ।
তবে, খুচরা বাজারে দাম আরও বেশি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার ধানমন্ডিতে ১২ কেজি ওজনের একটি তরমুজ ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ
১. উচ্চ চাহিদা: রমজান মাসে ইফতারের জন্য তরমুজের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, যা দাম বাড়ায় ।
২. পরিবহন সমস্যা: পথে চাঁদাবাজি ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে ।
৩. মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব: কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে কিনে শহরে উচ্চ দামে বিক্রি করায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ।
কৃষকদের অবস্থা
কৃষকরা তরমুজ উৎপাদনে লাভবান হলেও, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে প্রকৃত লাভ কম পাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, এক কৃষক ৩ বিঘা জমিতে ২৫০টি তরমুজ উৎপাদন করে ৭৫,০০০ টাকায় বিক্রি করেছেন, কিন্তু সেই তরমুজগুলো খুচরা বাজারে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ।
ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া
উচ্চ দামের কারণে অনেক ভোক্তা তরমুজ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে, ইফতারের জন্য তরমুজের চাহিদা থাকায় অনেকেই কম পরিমাণে কিনছেন ।
সমাধান ও সুপারিশ
১. সরকারি নিয়ন্ত্রণ: বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
২. পরিবহন সুবিধা: কৃষকদের জন্য পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সরাসরি বিক্রয়: কৃষকদের সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিক্রির সুযোগ তৈরি করতে হবে।
উপসংহার
২০২৫ সালে তরমুজের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাবের কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি হস্তক্ষেপ ও সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
0 Comments