ভূমিকা
বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় ধান চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তবে ধান চাষে প্রচুর পরিমাণে সেচের পানি প্রয়োজন হয়, যা ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয়। এই সমস্যার সমাধানে "এডব্লিউডি" বা "অলটারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রায়িং" সেচ পদ্ধতি একটি কার্যকর প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
AWD পদ্ধতি কী?
AWD পদ্ধতিতে ধানক্ষেতে পর্যায়ক্রমে পানি দেওয়া এবং শুকানোর প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে জমিতে ছিদ্রযুক্ত একটি প্লাস্টিক পাইপ স্থাপন করা হয়, যা দিয়ে মাটির পানির স্তর পর্যবেক্ষণ করা যায়। যখন পানির স্তর ১৫-২০ সেন্টিমিটার নিচে নেমে যায়, তখন পুনরায় সেচ দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় জমিতে অতিরিক্ত পানি জমে থাকার সম্ভাবনা কমে যায় এবং পানি সাশ্রয় হয়।
AWD পদ্ধতির সুবিধাসমূহ
পানি সাশ্রয়: AWD পদ্ধতি ব্যবহার করে ধান চাষে ১৫-৩০% পর্যন্ত সেচের পানি সাশ্রয় করা সম্ভব।
উৎপাদন খরচ হ্রাস: পানি সাশ্রয়ের ফলে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও শ্রম খরচ কমে যায়, যা কৃষকের মোট উৎপাদন খরচ হ্রাস করে।
পরিবেশগত সুবিধা: এই পদ্ধতি ব্যবহারে মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ কমে যায়, যা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহায়ক।
ফসলের স্বাস্থ্য উন্নয়ন: জমিতে পর্যায়ক্রমে শুকানোর ফলে মাটিতে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ে, যা ধানের শিকড়ের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ
সচেতনতার অভাব: অনেক কৃষক AWD পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নন, ফলে তারা এই প্রযুক্তি গ্রহণে অনাগ্রহী।
প্রযুক্তিগত সহায়তার অভাব: AWD পাইপ ও অন্যান্য সরঞ্জামের সহজলভ্যতা এবং ব্যবহারের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।
নীতিগত সহায়তা: AWD পদ্ধতির বিস্তারে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরও নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
AWD পদ্ধতি বাংলাদেশের ধান চাষে একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব সেচ পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই প্রযুক্তির বিস্তারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
উপসংহার
AWD পদ্ধতি ধান চাষে পানি সাশ্রয়, উৎপাদন খরচ হ্রাস এবং পরিবেশ রক্ষায় একটি কার্যকর সমাধান। এই প্রযুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি খাতে একটি টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।
0 Comments