২০২৫ সালের মে মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার ড্রোন হামলা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এই হামলাগুলো কেবল সামরিক নয়, বরং বেসামরিক এলাকাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে, যার ফলে ব্যাপক ধ্বংস, হতাহতের ঘটনা এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
সাম্প্রতিক হামলার বিবরণ
কিয়েভে ড্রোন হামলা
মে ৩-৪, ২০২৫ তারিখে, রাশিয়া কিয়েভে ড্রোন হামলা চালায়, যার ফলে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। হামলার ফলে ওবলনস্কি, স্ভিয়াতোশিনস্কি এবং শেভচেনকিভস্কি জেলায় আবাসিক ভবনে আগুন লাগে। ৭৬ জন দমকলকর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন, এবং বেশ কয়েকটি গাড়িও পুড়ে যায়।
খারকিভে ব্যাপক ড্রোন হামলা
মে ৩ তারিখে, রাশিয়া খারকিভ শহরে ১৭টি ড্রোন হামলা চালায়, যার ফলে ৪৭ জন আহত হন। হামলাগুলো শহরের চারটি কেন্দ্রীয় জেলায় সংঘটিত হয়, যেখানে আবাসিক ভবন, দোকানপাট এবং অন্যান্য বেসামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ওডেসা ও চেরকাসিতে হামলা
ওডেসায় রাশিয়ার ড্রোন হামলায় দুইজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হন। চেরকাসি অঞ্চলেও ড্রোন হামলার ফলে বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগে, যদিও সেখানে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
মানবিক প্রভাব
এই ড্রোন হামলাগুলো ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। আবাসিক ভবন ধ্বংস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহে বিঘ্ন এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, এবং অনেক পরিবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলাগুলোর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা রাশিয়ার এই কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার এই হামলাকে "খারাপ সময়ে সংঘটিত" বলে উল্লেখ করেছেন এবং পুতিনকে এই হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরক্ষা
ইউক্রেন রাশিয়ার এই হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। দেশটি তার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করছে এবং আন্তর্জাতিক মিত্রদের কাছ থেকে সহায়তা চাচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে তারা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
রাশিয়া মে ৮-১০ তারিখে একটি ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, যা ইউক্রেন "প্রতীকী" বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। এর পরিবর্তে, ইউক্রেন একটি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করেছে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে একটি দীর্ঘমেয়াদী শান্তি আলোচনা শুরু করার আশা করা হচ্ছে।
উপসংহার
২০২৫ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার ড্রোন হামলা দেশটির বেসামরিক জনগণের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এই হামলাগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই হামলাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জোরদার করা।
0 Comments