২০২৫ সালের ১১ মার্চ, ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে ম্যানিলার নিওনয় আকুইনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন। এই গ্রেফতারি পরোয়ানাটি ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়। গ্রেফতারের পর, দুতের্তেকে হেগে অবস্থিত ICC-এর হেফাজতে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার মুখোমুখি হচ্ছেন।
গ্রেফতারের পটভূমি ও অভিযোগ
দুতের্তের বিরুদ্ধে ICC যে অভিযোগ এনেছে, তার মূল ভিত্তি ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তার প্রেসিডেন্সির সময় পরিচালিত মাদকবিরোধী অভিযানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই অভিযানে হাজার হাজার মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণির নাগরিক, extrajudicial হত্যার শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে। ICC-এর মতে, এই হত্যাকাণ্ডগুলি মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে, এবং দুতের্তে এই অপরাধগুলির জন্য দায়ী।
গ্রেফতারের প্রক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া
দুতের্তে হংকং থেকে ফিরে আসার পর, ফিলিপাইন ন্যাশনাল পুলিশ ও ইন্টারপোলের যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন এবং তার মেয়ে, ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তে, এই গ্রেফতারকে "অবিচার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা" বলে অভিহিত করেন।
গ্রেফতারের পর, দুতের্তেকে ভিলামোর এয়ার বেসে নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে করে হেগে পাঠানো হয়। ফিলিপাইন সরকার জানায়, তারা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ICC-এর অনুরোধ অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও প্রতিক্রিয়া
দুতের্তের গ্রেফতার ফিলিপাইনের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই গ্রেফতারকে "বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ" হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে, দুতের্তের সমর্থকরা বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন, বিশেষ করে মিন্দানাও ও ভিসায়াস অঞ্চলে।
ফিলিপাইনের ক্যাথলিক বিশপদের সম্মেলন (CBCP) এক বিবৃতিতে জানায়, "এই গ্রেফতার দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।" তবে, কিছু ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা এই গ্রেফতারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব
দুতের্তের গ্রেফতার আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই গ্রেফতারকে "বিচারের পথে একটি মাইলফলক" হিসেবে অভিহিত করেছে।
এই গ্রেফতার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কার্যকারিতা ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি নজির স্থাপন করেছে যে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারীরা, যত উচ্চপদস্থই হোক না কেন, বিচারের আওতায় আসতে পারে।
উপসংহার
সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের গ্রেফতার ফিলিপাইন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি শুধুমাত্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ ও কার্যকারিতা প্রদর্শনের একটি উদাহরণ। এই গ্রেফতার ভবিষ্যতে অন্যান্য নেতাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
0 Comments