Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

এবার তিন বিভাগেই ব্যর্থতা মেনে নিলেন লিটন: স্বীকারোক্তিতে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা

 


ভূমিকা

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম সিনিয়র খেলোয়াড় লিটন কুমার দাস। একসময় যাকে নিয়ে ভবিষ্যতের ‘ব্যাটিং স্তম্ভ’ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে সেই লিটন যেন খেই হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু ব্যাট হাতে নয়, অধিনায়কত্ব ও ফিল্ডিংয়েও এসেছে তীব্র সমালোচনা। এবার নিজেই সামনে এসে তিন বিভাগেই ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিলেন লিটন।


পারফরম্যান্সের গ্রাফ: নিম্নমুখী পতন

২০২২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত লিটনের ব্যাট যেন ছিল আগুনে। ওপেনিংয়ে নামলে দলের ভরসার প্রতীক ছিলেন তিনি। কিন্তু গত এক বছরে তার ব্যাটে দেখা গেছে চরম খরা।

সাম্প্রতিক ১০ ইনিংসে স্কোর:

১৪, ০, ৩, ২১, ১৯, ৭, ১, ২৬, ৯, ১০

এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, লিটন তার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু ব্যাট নয়, ফিল্ডিংয়েও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ফেলেছেন, উইকেটকিপিংয়ে এসেছে ভুল ডিসিশন, আর অধিনায়ক হিসেবেও ছিলেন অনিয়মিত ও চাপে থাকা।


সংবাদ সম্মেলনে লিটনের স্পষ্ট স্বীকারোক্তি

সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুখোমুখি হন লিটন দাস। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবেই বললেন:

“আমাদের ব্যর্থতা তিনটি দিকেই— ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং। আমি নিজেও এই তিন বিভাগেই নিজের সেরা পারফরম্যান্স দিতে পারিনি। সেটা মানতেই হবে।”

এমন অকপট স্বীকারোক্তি খুব কম ক্রিকেটারই দিতে পারেন, বিশেষ করে এমন চাপে থাকার সময়। তবে লিটনের এই গ্রহণযোগ্যতা দেখায়, তিনি ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত।


ব্যাটিং ব্যর্থতার পেছনে কী কারণ?

বিশ্লেষকরা বলছেন, লিটনের ব্যাটিং টেকনিক বা সামর্থ্যে ঘাটতি নেই। বরং সমস্যা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে।

ক্রিকেট বিশ্লেষক আতহার আলি খান বলেন:

“লিটন অনেক ট্যালেন্টেড একজন ক্রিকেটার। কিন্তু কখন কী শট খেলবে— সেটা নিয়ে তার মাঝে দ্বিধা কাজ করে। আত্মবিশ্বাস নেই বলেই বারবার আউট হচ্ছেন। এ সমস্যা মানসিক।”

অন্যদিকে কিছু সমালোচক বলছেন, অতিরিক্ত দায়িত্ব (যেমন অধিনায়কত্ব) তার মূল খেলায় প্রভাব ফেলেছে।


উইকেটকিপার হিসেবে প্রশ্নবিদ্ধ

মুশফিকুর রহিমের পর উইকেটকিপার হিসেবে নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছিলেন লিটন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তার হাতে বেশ কয়েকটি সহজ ক্যাচ ফস্কে গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্টাম্পিং মিস করেছেন।

উইকেটের পেছনে দায়িত্বপূর্ণ না হতে পারলে দলের ওপর চাপ আরও বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে লিটনের জন্য নিজেকে প্রমাণ করার চাপ দ্বিগুণ।


অধিনায়কত্বেও এল প্রশ্ন

সাম্প্রতিক এক সিরিজে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান লিটন দাস। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরতা, মাঠে নেতিবাচক ভাষা ও পরিকল্পনার ঘাটতি চোখে পড়ে।

মাঠের মধ্যে তার শরীরী ভাষা (body language) কখনো হতাশাজনক ছিল বলে মত দিয়েছেন অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক।

একটি ম্যাচে তৃতীয় পাওয়ারপ্লেতে জোরালো বোলিং পরিবর্তন না করায় প্রতিপক্ষ দ্রুত রান তোলে এবং ম্যাচ ছিনিয়ে নেয়। পরে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে লিটন বলেন:

“সিদ্ধান্তগুলো ঠিক সময়মতো নেওয়া হয়নি, সেটা স্বীকার করছি। অধিনায়কত্ব মানেই বড় দায়িত্ব, আমি শিখছি।”


দলের ভেতর-বাহিরে প্রতিক্রিয়া

লিটনের এই খোলামেলা স্বীকারোক্তির পর ক্রিকেটাঙ্গনে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এসেছে।

একজন সাবেক অধিনায়ক বলেন:

“ভুল স্বীকার করা সাহসের কাজ। তবে এখন চাই পরবর্তী অ্যাকশন। শুধু মুখে নয়, মাঠেও সেটা প্রমাণ করতে হবে।”

সমর্থকরাও ধৈর্য হারাচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে— “ট্যালেন্ট দিয়ে তো আর ম্যাচ জেতানো যায় না, পারফর্ম করো”—এমন সব মন্তব্য।

তবে অনেকেই বলছেন, “একটু সময় দাও, লিটন ঘুরে দাঁড়াতে জানে।”


ভবিষ্যতের পথ কী?

তিন বিভাগেই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করার পর লিটনের সামনে এখন দুটি পথ— হয় পরিশ্রম করে ফিরে আসা, নয়তো আরও সমালোচনার মুখে পড়া।

তার উচিত হবে:

এক-দুই ম্যাচ বিশ্রাম নিয়ে ফর্ম ফিরে পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া

ব্যাটিং নিয়ে আলাদা কাজ করা (নেটে বেশি সময় দেওয়া)

উইকেটকিপিংয়ে মনোযোগ ও কনসেনট্রেশন বাড়ানো

নেতৃত্বে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও দলীয় সমন্বয় নিশ্চিত করা


কোচিং স্টাফের ভূমিকা

বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ ও প্রধান কোচ উভয়েই লিটনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তারা বলছেন, আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনাই এখন মূল লক্ষ্য।

কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেন:

“লিটন বড় প্লেয়ার। তার ভেতরে অনেক সামর্থ্য আছে। আমরা চাই সে সময় পাক, ফিরে আসুক নিজের সেরা রূপে।”


উপসংহার

লিটন দাসের তিন বিভাগে ব্যর্থতার স্বীকারোক্তি নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ। এতে বোঝা যায়, তিনি বাস্তবতা স্বীকার করছেন এবং সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হতে চাইছেন।

তবে শুধু স্বীকারোক্তি যথেষ্ট নয়—মাঠে প্রমাণই হবে আসল জবাব। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা চাইছেন, তাদের লিটন আবার জ্বলে উঠুক—সেই আগের মতোই, দায়িত্ববান, আত্মবিশ্বাসী এবং ফলপ্রসূ।

Post a Comment

0 Comments