ভূমিকা
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আবারও বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি এক ভয়াবহ হামলায় অন্তত ৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৬ জন একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া অবস্থায় মারা যান। ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের এমন ঘটনার পর আবার প্রশ্ন উঠছে—গাজায় নিরাপদ বলতে কিছু আছে কি?
ঘটনার বিবরণ
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (IDF) দাবি করেছে যে তারা একটি “সন্ত্রাসী ঘাঁটি” লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে লক্ষ্যবস্তু ছিল জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুল, যেখানে শতাধিক সাধারণ মানুষ—নারী, শিশু ও বৃদ্ধ—আশ্রয় নিয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভোররাতে হঠাৎ করে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ শুরু হয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পুরো ভবনটি ধসে পড়ে এবং ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে বহু মানুষ।
নিহতদের মধ্যে শিশু ও নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ
জাতিসংঘের মতে, নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও নারী। এই স্কুলটি মূলত যুদ্ধের সময় আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই স্থাপনার অবস্থান জাতিসংঘের মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনীকে আগেই জানানো হয়েছিল।
একজন বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন:
“আমার দুই সন্তান এখানে আশ্রয় নিয়েছিল, ওদের আর খুঁজে পেলাম না। আমি শুধু স্কুলে পাঠিয়েছিলাম নিরাপদে থাকবে বলে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পরপরই জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন:
“আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন হয়েছে। স্কুল, হাসপাতাল, এবং শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র কখনোই লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না।”
তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়া সহ অনেক মুসলিম দেশের নেতারা এই হামলাকে "যুদ্ধাপরাধ" হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
গাজায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে
এই হামলা গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করেছে:
স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে
মরদেহ সংরক্ষণের মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই
শিশুদের অপুষ্টি ও মানসিক ট্রমা বেড়েই চলেছে
বেসরকারি সংগঠনগুলো জানাচ্ছে, “আমরা আর কাউকে সাহায্য করতে পারছি না, কারণ গাজার কোথাও নিরাপদ নেই।”
স্কুলে হামলা: আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ
জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের আওতাভুক্ত। অথচ ইসরায়েল একের পর এক স্কুল, হাসপাতাল ও ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে হামলা চালিয়েই যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য রয়েছে:
জনমনে ভয় সৃষ্টি করা
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে দমন করা
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার আগেই সামরিক উদ্দেশ্য পূরণ
বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ
ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে:
লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, প্যারিস সহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ
সামাজিক মাধ্যমে #FreePalestine ট্রেন্ড
মুসলিম বিশ্বে শুক্রবার জুমার খুতবায় গাজা পরিস্থিতির আলোচনা
বাংলাদেশেও বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থা বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
সমাধানের পথে এগোনো জরুরি
এই হামলার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে—গাজা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানগুলোর একটি। শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন, যাতে:
ফিলিস্তিনিরা নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা পায়
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিরপেক্ষ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে
দোষীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়
উপসংহার
স্কুলে আশ্রয় নেওয়া শিশু ও নারীদের ওপর বোমা বর্ষণ কোন সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। কিন্তু গাজায় সেটাই বাস্তব। এই নিষ্ঠুরতা থামাতে হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই সোচ্চার হতে হবে। নীরবতা মানে সম্মতি—এবং প্রতিটি নীরবতা আরেকটি ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
0 Comments