চট্টগ্রামের কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ায় ২২ জুন, রবিবার ভোরে একটি অস্থায়ী পুলিশ চেকপোস্টে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। সকাল প্রায় ৬টার দিকে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকের চালান আটকানোর কথা ভেবে লোহাগাড়া থানার পুলিশ টহল দল অস্থায়ীভাবে আধুনগর এলাকায় চেকপোস্ট বসায়।
চেকপোস্টে সিএনজি তল্লাশির সময় সামনে একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। পুলিশ প্রথমে একটি মোটরসাইকেলকে থামার সংকেত দিলে, তা দ্রুত পেছনে চলে যায়। এরপর আবার দ্বিতীয় একটি বাইকের পেছনের আরোহীকে থামানোর চেষ্টা করতেই সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুত গতিতে পালানোর চেষ্টা করে। এ পর্যায়ে, এক কনস্টেবল—পরে জানা যায় তার নাম মো. মনসুর—মোটরসাইকেলের পেছনের আরোহীকে ধাক্কা দেন। এতে ট্রাকের সাথে ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে বাইক আরোহী, তার পরেই ওই উচ্চারিত অবস্থায় থাকা অন্য কনস্টেবল মো. আলাউদ্দিন এই সংঘর্ষে আহত হন ।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়: পেছনের বাইকের ধাক্কায় আলাউদ্দিনকে বাইকের গভীর আলোচ্য অঙ্গচক্রে ফেলে দেন, আর তার পা ট্রাকের চাকায় আটকে যায় ।
গুরুতর অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারে তার পায়ের একটি অংশ কেটে ফেলতে হয় ।
খবর প্রকাশের সময় পর্যন্ত কলোনেল মনসুর পলাতক না হলেও, সরকারি দলের অনুসন্ধান কমিটি তৎপর রয়েছে ।
পুলিশ দায়িত্ব ও দায়িত্বহীনতা
লোহাগাড়া থানার ওসি আরিফুর রহমান জানান, দুর্ঘটনাটা মূলত সংকেত না মানার ফল। তবে ব্যক্তিগতভাবে বাইকের আরোহীকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়ায় মূল ঘটনা সৃষ্টির পেছনে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর আর্কষিত হয় ও তদন্তের নির্দেশ দেয় ।
আরেকদিকে, সাতকানিয়া সার্কেলের এডিশনাল এসপি মো. তফিকুল আলম বলেন, সংকেত না মানার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে মনসুরের পদক্ষেপে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে ।
আইনগত প্রক্রিয়া
ট্রাকটির চালক, হেলপার ও দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত তাদের রিমান্ডে কারাগার পাঠিয়েছেন । তবে মনসুরের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও, তার বিরুদ্ধে পুলিশের অভ্যন্তরীণ কোনো নিষেধাজ্ঞা বা শাস্তির ব্যবস্থা এখনও নেয়া হয়নি ।
সামাজিক ও জনমত
ভিডিও ফুটেজ যখন ভাইরাল হয়, তখন থেকেই সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন: একজন অফিসার কীভাবে দায়িত্ব পালনের নামে অতিমাত্রায় জোর প্রয়োগ করতে পারেন? বিশেষভাবে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রশিক্ষণ, স্বচ্ছ মনোভাব, এবং মানবিক আচরণ। পুলিশের প্রতি নাগরিকদের আস্থা রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনা একটি মর্মান্তিক প্রতিফলন হয়ে উঠেছে।
উপসংহার
দুর্ঘটনার কারণ: সংকেত না মানায় মোটরসাইকেল পালানোর চেষ্টা; তবে পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগই গুরুতর ঘটনা সৃষ্টি করেছে।
দুর্ঘটনার পরিণতি: একজন কনস্টেবল আলাউদ্দিনের পা কেটে ফেলতে হয়, মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতির পাশাপাশি ভবিষ্যতে তার ক্যারিয়ার ও জীবনযাত্রায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।
ইনডোর অংশগ্রহণ: সংঘটিত অনিয়ম‑সহ মিথ্যা প্রতিনিধিত্বের জন্য তদন্ত চলছে। কিন্তু গোটা পরিস্থিতির জন্য অন্যদের গ্রেপ্তার করা হলেও, মনসুরের বিরুদ্ধে এখনো কোনো যদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জনতার প্রতিক্রিয়া: ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সমালোচনা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। নাগরিকরা পুলিশী দায়িত্বের সঙ্গে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সতর্কতা ও প্রশিক্ষণ দাবি করছেন।
এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় চেয়ারছাড়া পদক্ষেপ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় — বিশেষ করে যখন তার কারণে একজন সাধারণ অফিসার শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারেন। প্রশাসনকে উচ্ছে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন করুণ ঘটনায় আর কেউ আক্রান্ত না হন।
0 Comments