নতুনবাজার এলাকার পরিস্থিতি শনিবার (২১ জুন) সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ একাধিক দাবিতে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা নতুনবাজার-গুলশান-বনশ্রী সংযোগ সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। এর ফলে নতুনবাজার থেকে কুড়িল বিশ্বরোড এবং বাড্ডা হয়ে বনশ্রীর দিকে যাওয়া সড়কগুলোতে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে এবং আশপাশের এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে বহিষ্কারাদেশ জারি করেছে তা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং বেআইনি। তারা প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন করছেন। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছেন, "হয় বহিষ্কার বাদ যাবে, না হয় আমার লাশ যাবে", "প্রত্যাহার বহিষ্কার, তারপর হবে সংস্কার", "প্রাইভেট খাতে শিক্ষাকর প্রত্যাহার করতে হবে" ইত্যাদি। মূলত এ আন্দোলনের সূচনা হয় গত ২৬ এবং ২৭ এপ্রিল ইউআইইউ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের এক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে, যার প্রেক্ষিতে উপাচার্যসহ ১১ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতে হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে অনলাইন ক্লাস চালু হলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে স্বাভাবিক ক্লাস ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন তাদের ১৩ দফা যৌক্তিক দাবি আমলে না নিয়ে উল্টো আন্দোলন দমন করতে বহিষ্কারাদেশ, তদন্ত এবং বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ড ২৬ মের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লে পুরো টিউশন ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিলেও শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।
এদিকে ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাকিবুল হাসান জানান, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর পক্ষ থেকে এ ইস্যু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. সুলতান মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো শোনা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব।
নতুনবাজারে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন শিক্ষাব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন নিশ্চিতকরণের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে, যা পুরো দেশের শিক্ষা অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আগামী দিনে এ আন্দোলন কীভাবে মোড় নেবে এবং কর্তৃপক্ষ এ সংকটের সুষ্ঠু সমাধান করতে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
0 Comments