Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

মে মাসে ৫০১টি সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৪৯০

 


অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার একটি ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে, যা দেশের মানুষের জন্য এক বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)-এর তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের মে মাসে সারাদেশে মোট ৫০১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৯০ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৫৪১ জন। এই পরিসংখ্যান কেবল একটি সংখ্যাই নয়, এটি বাংলাদেশে সড়কপথের নিরাপত্তা সংকটকে আরও স্পষ্ট করে তোলে এবং এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জরুরীতা জোরালোভাবে মনে করিয়ে দেয়।

প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের যাতায়াতের ভরসাস্থল এই সড়কপথ, যা অনেক সময় হয়ে ওঠে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কারণ। এই দুর্ঘটনাগুলোর পেছনে নানা ধরনের কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন না মানা, বেপরোয়া চালনা, যানবাহনের ফিটনেস না থাকা, এবং অসচেতন পথচারীর আচরণ। এছাড়াও অনেক সড়কের বেহাল দশা, অপ্রশস্ততা এবং বিপজ্জনক বাঁকের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় দেখা যায়, সড়কে প্রয়োজনীয় সিগন্যাল, মার্কিং বা আলোর অভাবও দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকটা বাড়িয়ে তোলে।

এসব দুর্ঘটনার প্রভাবে পরিবারগুলো হারাচ্ছে তাদের উপার্জনক্ষম সদস্যকে, আহত অনেকের জীবনে নেমে আসছে স্থায়ী পঙ্গুত্ব, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে। শিশু, নারী, বৃদ্ধ – কেউই এর বাইরে নয়। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি শুধু একটি মৃত্যু নয়, একটি পরিবারের স্বপ্ন, আশা এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার অবসান।

সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য বিআরটিএ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কার্যকর আইন প্রয়োগ, চালকদের প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচারণা, এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ সড়কগুলো চিহ্নিত করে তা সংস্কার ও নিরাপদ করে তোলার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বিশেষ করে, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, চালকদের মানসিক প্রশিক্ষণ, ফিটনেস বিহীন যানবাহন বন্ধে কঠোর নজরদারি এবং দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নাগরিক সচেতনতারও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পথচারীদের সঠিকভাবে রাস্তা পারাপার, চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলা, এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পেতে পারে। পাশাপাশি, গণমাধ্যমের ভূমিকা এবং সামাজিক আন্দোলনও মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

সর্বোপরি, মে মাসে ঘটে যাওয়া ৫০১টি দুর্ঘটনা এবং ৪৯০ জনের মৃত্যু বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি কঠোর বার্তা। সড়কগুলোকে নিরাপদ করার জন্য সরকারি, বেসরকারি ও নাগরিক পর্যায়ে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ না করলে এই মৃত্যুর মিছিল থামবে না। একটি নিরাপদ, সচল এবং মানবিক সড়কব্যবস্থা নিশ্চিত করা আজ সময়ের দাবি, যাতে প্রতিটি যাত্রী গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছাতে পারে এবং একটি সুখী, নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে।

Post a Comment

0 Comments