ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ২০২৫ সালের জুন মাসে নতুন মাত্রা লাভ করেছে। ১৪ জুন দিবাগত রাতে ইরান একযোগে ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত ও ২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। হাইফা শহরের একটি জ্বালানি কেন্দ্রে আগুন ধরে যাওয়ার পাশাপাশি তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের দাবি, এই হামলা তাদের প্রতিরোধের অধিকার হিসেবে পরিচালিত হয়েছে এবং ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে।
হামলার পরপরই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং বাংকারে আশ্রয় নিতে নাগরিকদের নির্দেশ দেয়। ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ডস (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলার লক্ষ্য ছিল হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও আইআরজিসি কমান্ডার আব্বাস নিলফোরোশনকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া। তারা দাবি করেছে, ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
এই হামলার পর ইসরায়েলও পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ৫০টি ফাইটার জেট নিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এই হামলায় ইরানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র ও মিসাইল স্থাপনা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। ইরান দাবি করেছে, এই হামলায় তাদের সামরিক অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, ইরান তার নতুন "ফাতাহ-১" হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা মাত্র ৪০০ সেকেন্ডে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ও গতিবিধি পরিবর্তনের ক্ষমতা এটিকে প্রতিরোধ করা কঠিন করে তোলে।
এছাড়া, ইরান তার নতুন "হাজ কাসেম" গাইডেড ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছে, যা ইরানের শীর্ষ সেনা কমান্ডার কাসেম সোলেইমানির নামে নামকরণ করা হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার ইরানের সামরিক সক্ষমতার উন্নতির ইঙ্গিত দেয়।
মধ্যপ্রাচ্যে এই উত্তেজনা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান থেকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, এই হামলা ইরানের সামর্থ্যের "ঝলক" মাত্র এবং ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন।
এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে। উভয় পক্ষের সামরিক প্রস্তুতি ও পাল্টাপাল্টি হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সংঘাত নিরসনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা।
0 Comments