চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার মেডিকেল মোড় ছাইতনতলা এলাকা থেকে বিএনপির নেত্রী ও ভোলাহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান শাহনাজ খাতুনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার (২৮ জুন ২০২৫) রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জেরে ঘটে যাওয়া একটি সহিংস ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগের ভিত্তিতে এই গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়।
জানা গেছে, গত ২৩ জুন উপজেলার চরধরমপুর মিস্ত্রিপাড়া গ্রামে শাহনাজ খাতুনের আত্মীয়দের মধ্যে একটি পারিবারিক বিবাদ দেখা দেয়। ওই বিবাদের এক পর্যায়ে গরম ডাল ছুড়ে মারার ঘটনায় সাইবুর রহমান নামের একজন ব্যক্তি আহত হন। এরপর তার স্ত্রী বাদী হয়ে ভোলাহাট থানায় মামলা করেন, যেখানে শাহনাজ খাতুনকে ‘উসকানিদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মামলায় তাকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে না দেখালেও সহায়তাকারী হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই মামলার ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে তার বাসা থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) এ.এন.এম. ওয়াসিম ফিরোজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলা তদন্তাধীন রয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই তাকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, তদন্ত শেষে বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহনাজ খাতুন দীর্ঘদিন ধরে ভোলাহাট উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। তিনি শুধু দলের একজন দায়িত্বশীল নেত্রীই নন, বরং উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও ছিলেন এক সময়। ফলে তার গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এই গ্রেপ্তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সরকার দলীয় প্রভাবেই তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
এদিকে, স্থানীয় জনগণের একাংশ বলছে, শাহনাজ খাতুনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই কিছু অভিযোগ ছিল। তার সম্পৃক্ততায় স্থানীয় বিরোধ-সংঘাতে উত্তেজনা তৈরি হওয়ার নজিরও রয়েছে। যদিও এসব অভিযোগ কখনোই প্রমাণিত হয়নি বা আইনি প্রক্রিয়ায় অনেক দূর এগোয়নি।
ঘটনাটি সামনে আসার পর সামাজিক মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ শাহনাজ খাতুনের গ্রেপ্তারকে ন্যায়বিচারের অংশ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকেই বলছেন, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের হয়রানি করে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে আরও সংকুচিত করা হচ্ছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এভাবে গ্রেপ্তার ও মামলার প্রবণতা বিরোধী দলের জন্য রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
বর্তমানে শাহনাজ খাতুন পুলিশ হেফাজতে আছেন এবং তার জামিন আবেদন বা রিমান্ডের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টির আইনি গতি প্রকৃতি নির্ভর করবে পুলিশের প্রতিবেদন ও আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর।
0 Comments