হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা প্রথমে 'আর্শ' (ঈশ্বরীয় সিংহাসন) সৃষ্টি করেন, তারপর পানি, তারপর আকাশ ও পৃথিবী। হাদীসে ইবনে মাজাহ শরীফের এক বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"كَانَ اللَّهُ وَلَمْ يَكُنْ شَيْءٌ غَيْرُهُ، وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ، وَكَتَبَ فِي الذِّكْرِ كُلَّ شَيْءٍ، وَخَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ"
অর্থ: “আল্লাহ ছিলেন, আর তার ছাড়া কিছুই ছিল না। তাঁর ‘আরশ’ ছিল পানির উপর। এরপর তিনি লওহে মাহফুজে সবকিছু লিখে ফেললেন এবং সৃষ্টি করলেন আসমান ও জমিন।”
— (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩১৯১)
এই হাদীস থেকে জানা যায়, আল্লাহর অস্তিত্ব চিরন্তন, তিনি সৃষ্টিজগতের আগে থেকেই ছিলেন এবং সময় ও স্থানের সীমার বাইরে ছিলেন। তাঁর সৃষ্টির সূচনা হয় ‘আর্শ’ ও পানির মাধ্যমে, এরপর তিনি পরিকল্পিতভাবে পৃথিবী ও আকাশসমূহ সৃষ্টি করেন।
এক হাদীসে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ আকাশসমূহকে সাতটি স্তরে সৃষ্টি করেছেন। যেমন:
"السَّمَاوَاتِ سَبْعًا طِبَاقًا" — কুরআনুল কারিমেও এই বক্তব্য রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ব্যাখ্যায় বলেন, আকাশ একটির উপর একটি স্তরাকারে সৃষ্টি হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন:
“আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন।”
— (মুসলিম শরীফ, তাফসীর সূরা হা-মীম)
এছাড়া, সাহাবিদের মাঝে এ বিষয়ে একাধিক প্রশ্নোত্তর হয়েছে। একবার হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন:
“আল্লাহ রব্বুল আলামীন প্রথমে আকাশকে ধোঁয়ার অবস্থা (دخان) থেকে সৃষ্টি করেন।”
— কুরআনের সূরা ফুসসিলাত আয়াত ১১–১২ এর ইঙ্গিতে।
আকাশ ও পৃথিবীর ব্যাপ্তি
রাসুলুল্লাহ (সা.) একাধিকবার হাদীসে উল্লেখ করেছেন যে, পৃথিবী ও আকাশের ব্যাপ্তি মানুষের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। তিনি বলেন:
“সপ্তম আকাশের ওপর ‘আর্শ’ রয়েছে, আর তার নিচে রয়েছে কুরসী। আর্শ ও কুরসীর মাঝে যে দূরত্ব, তা এক আকাশ থেকে আরেক আকাশের মাঝের দূরত্ব থেকেও অনেক বেশি।”
— (তাবারানী ও হাকিম)
এভাবে হাদীস থেকে জানা যায়, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি ধাপে ধাপে, সুপরিকল্পিতভাবে হয়েছে এবং এগুলো সৃষ্টি করেছেন একমাত্র আল্লাহ। তিনি সময়, স্থান, পদার্থ এবং জ্ঞানের সব সীমা অতিক্রম করে সৃষ্টিকর্ম সম্পাদন করেছেন।
উপসংহার
আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে হাদীসসমূহ আমাদের একটি মৌলিক শিক্ষা দেয়: আল্লাহর কুদরত ও তাওহীদের গভীর উপলব্ধি। তিনি শূন্য থেকে এমন একটি বিস্তীর্ণ জগত সৃষ্টি করেছেন, যার প্রতিটি কণা তাঁর জ্ঞানে ও ইচ্ছায় নিয়ন্ত্রিত। হাদীস দ্বারা বোঝা যায় যে, সৃষ্টিজগৎ উদ্দেশ্যহীন নয়, বরং পরিপূর্ণ হিকমত ও উদ্দেশ্যপূর্ণ সৃষ্টির প্রতিফলন।
0 Comments