Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

‘দফা এক দাবি এক, চেয়ারম্যানের পদত্যাগ’, এনবিআরে আজও চলছে শাটডাউন


 গত শুক্রবার (২৮ জুন ২০২৫) থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)–এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেছে, যার মূল দাবি – বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের পদত্যাগ, এবং কর ব্যবস্থায় সত্যিকারের সংস্কার গ্রহণ। আন্দোলন চালাচ্ছে NBR Reform Unity Council, যারা মনে করেন এই চেয়ারম্যান “স্বৈরাচারী শাসকের দোসর” হিসেবে কাজ করছেন এবং স্বাধীন ও স্বচ্ছ রাজস্ব প্রশাসনের পথ বন্ধ করে রেখেছেন । এনবিআরের ঢাকা কার্যালয় অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে; ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে আন্দোলনরত কর্মীরা, পাশাপাশি ভেতরে র‍্যাব, পুলিশ ও কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে

শাটডাউন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা গত কয়েক দিন ধরে “পেন-ডাউন”, সিট-ইন ও মানববন্ধনের মতো প্রতিবাদের সেশন থেকে এক ধাপ উপরে গিয়েছেন। শনিবার সকাল ৯টা থেকে ‘Complete Shutdown’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা রোববার (২৯ জুন)ও অব্যাহত থাকবে; একই সঙ্গে তারা আয়োজন করছে “March to NBR”, যেখানে ঢাকাসহ দেশের সব জেলা থেকে যোগ দিয়েছেন উৎসাহী কর্মীরা

শাটডাউনের ফলে দেশের শুল্ক ও কর আদায়ের প্রায় সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল কাস্টম হাউস, ঢাকা বিমানবন্দরসহ সব কাস্টমস স্টেশন ও ভ্যাট–ইনকাম ট্যাক্স অফিস সেবা বন্ধ করে দিয়েছে কর্মীরা । বন্দর–জাতীয় কর আদায় প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছে, এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষতির ভয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে

ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা এই পরিস্থিতি স্বাগত না করে সরকারের সঙ্গে দ্রুত আলোচনার দাবি তুলেছেন, কারণ তাদের মতে প্রথম ধাপে চালু থাকা কর প্রক্রিয়াগুলো আজকের দিনেও বন্ধ থাকছে, যার ফলে আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে । চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ব্যবসায়ীদেরা জানিয়েছেন, দেরি হলে তাদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হবে — “দলিলপত্র তৈরি ও জাহাজ বোঝাইয়ের কাজ আটকে গেছে”

সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর–সহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে গত ২৬ জুন এক বৈঠকে এই বিষয় আলোচিত হয়; মন্ত্রিপরিষদ একটি সমঝোতা কমিটি গঠন ও ১ জুলাই বৈঠকের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে । তবে আন্দোলন সমন্বয়কারীরা এই বৈঠকে যোগ দিতে ইচ্ছুক হলেও এখনও আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পায়নি, এবং তারা ৩০ জুন কালকে দ্বিতীয় বৈঠকের ডাকের অপেক্ষায় আছে

NBR Reform Unity Council–এর সভাপতি হাছান মুহাম্মদ তারেক রিকাবদার জোর দিয়ে বলেছেন “কর সংস্কার সম্ভব নয় বর্তমান চেয়ারম্যানের অধীনে” এবং তারা রাষ্ট্রীয় ও রাজস্ব কাঠামোয় পূর্ণ, প্রকৃত ও স্থায়ী সংস্কারের দাবি রাখছেন । তারা বলেন, এজন্যই “চেয়ারম্যানের পদত্যাগ” অবিলম্বে প্রয়োজন; তা না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে

গত কয়েক দিন ধরেই আন্দোলনরত কর্মীদের সামনে জল কামান ও বিশেষ বাহিনীর মোতায়েন দেখা যাচ্ছে, যা রাজপথীয় উত্তেজনারতথ্যকে প্রমাণ করে । পরিস্থিতির গুরুতরতা বুঝতে পেরে থানা এলাকা ও সড়কে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী স্থাপন করা হয়েছে।

আর্থিক বা অর্থনীতির ক্ষতিপ্রভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, কারণ এই সময়–জুনের শেষ দিবসে কর আদায়ের পিক পয়েন্ট হওয়ায় বৈধ রাজস্ব ফি আদায় ব্যাহত হচ্ছে; ফলস্বরূপ সাম্মানিকভাবে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে ।

একই সাথে পড়াশোনা ও কর্মসূচি চলছে, যাতে তারা ২৪ ঘন্টা থেকে দীর্ঘমেয়াদি অভিযানে যেতে প্রস্তুত। নিজেদের দাবি যখন উপস্থাপন করছেন, তখন আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত আলোচনায় না বসলে আন্দোলন আরও জোরালো হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন


বিশ্লেষণ ও প্রভাব

এনবিআরের এই আন্দোলন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে কারণ:

প্রধান রাজস্ব সংস্থায় কর্মসূচি– এনবিআর জাতীয় রাজস্ব আদায়ের মূলে অবস্থান করে; সেখানে যদি ‘complete shutdown’ হয়, তাহলে সামগ্রিক অর্থনীতি ও সরকারি রাজস্ব-তহবিলে প্রভাব পড়বে।

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংকট– অর্ন্তগতভাবে এটি শাসন ব্যবস্থার উপর কর্মী-নেতৃবৃন্দ ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনার মধ্যে টানাপোড়েনের নির্দেশ করে।

রাজনৈতিক সংস্কারের আহ্বান– কর্মীরা শুধু পদত্যাগ দাবিই করছেন না, তাদের লক্ষ্য কর-রাজস্ব কাঠামোয় মৌলিক সংস্কার আনা।

আন্তর্জাতিক চিত্র– এর প্রেক্ষিতে বিদেশে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের ধারণা নষ্ট হতে পারে, কারণ তারা পূর্ণ রাজস্ব পরিষেবার ওপর নির্ভরশীল।


উপসংহার

‘Complete Shutdown’ ও ‘March to NBR’–এর মাধ্যমে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ (২৯ জুন) অব্যাহত রেখেছে আন্দোলন, যার কেন্দ্রবিন্দু চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের পদত্যাগ ও কর সংস্কারে মৌলিক পরিবর্তন গ্রহণ। পুরো পরিস্থিতি অধিকতর যুক্তিবদ্ধ ও সুসংগঠিত আন্দোলন বলেই মনে হচ্ছে। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের সব কর ও শুল্ক সংস্থায় কর্মসূচি চলছে—যা সরকারের রাজস্ব আদায় ও অর্থনৈতিক গতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

Post a Comment

0 Comments