২০১৫ সালের ১৯–২০ জানুয়ারির রাতে রাজধানীর খিলগাঁও থানার এলাকায় এক মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয়, যখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তার ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যাওয়ার পর ছাত্রদলের নেতা নুরুজ্জামান ‘জনি’ ও তার সহপাঠী মইনকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে ঢেলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরবর্তীতে পুলিশি হেফাজাতেই তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে গুলিতে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা স্থানীয়রা রাত ৩টার সময় “পানি পানি… মা মা…” বলে জনির আর্তনাদ শুনে থাকলেও, পরদিন পুলিশ দাবি করে তিনি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন । ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে জাতীয় তদন্ত কর্তৃপক্ষ এবং পরিবারের পক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জনির মরদেহে ১৬টি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়, যা একটি পরিকল্পিত হত্যা ও পুলিশের নিষ্ঠুরতা নির্দেশ করে।
দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত না হওয়ায়, জনির পিতা ইয়াকুব আলী ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যাতে সেদিনের ঘটনাকারী হিসেবে সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া–সহ অন্তত ৬২ জনের নাম উল্লেখ করা হয় । মামলাটির তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যে, আছাদুজ্জামান মিয়াসহ তদন্তকারীরা মূলত আহতদের ‘ক্রসফায়ারে’ পরিস্থিতি চালানোর চেষ্টা করেছিলেন। ওই মামলায় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সাবেক ডিসি আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়, পরে তা ১০ দিন পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করা হয়; আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ।
জনি হত্যাকাণ্ড ও মামলা ঘিরে জনমনে ব্যাপক মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। একটি দিক এই হত্যাকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসাবে রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিতে দেখা হলেও, পরিবারের পক্ষের দাবিতে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকারীরা মামলায় মূল অভিযুক্ত হয়েছেন। মামলা ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ বিলম্ব হওয়ার কারণে স্কুল, কলেজ শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক মহলে প্রবল ক্ষোভ ও উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে ।
বর্তমানে মামলার তদন্ত ধাপে রয়েছে এবং আদালত আছাদুজ্জামান মিয়া ও অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আরও রিমান্ড নির্দেশ দিয়ে প্রমাণ সংগ্রহে কাজ করছে। উত্তর দান ও আইনানুগ বিচার নিশ্চিতে যথাযথ তদন্ত চলমান—তবে এই মামলার ফলাফল ও প্রভাব বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক-আদালতীয় স্বচ্ছতার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন ।
0 Comments