ঘটনাস্থল ও সময়
২০২৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, সোমবার দুপুর আনুমানিক ১২:৫০ মিনিটে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটন এলাকায় একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, আগুনের সূত্রপাত হয় ইকো ভ্যালি রিসোর্টে, যা দ্রুত আশপাশের অবকাশ রিসোর্ট, মনটানা রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য স্থাপনায় ছড়িয়ে পড়ে ।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
এই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৯৪টি স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়, যার মধ্যে রয়েছে ৩২টি রিসোর্ট, ৩৫টি বসতবাড়ি, ২০টি দোকান ও ৭টি রেস্তোরাঁ । রিসোর্ট মালিকদের দাবি অনুযায়ী, আগুনে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকার মতো ।
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অভাব
সাজেক এলাকায় কোনো ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। দীঘিনালা ফায়ার স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট বেলা তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, এবং খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ও মাটিরাঙ্গা থেকে আরও ইউনিট এসে সন্ধ্যার আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ।Prothomalo+1Prothomalo+1
💧 পানির সংকট ও স্থানীয়দের দুর্দশা
সাজেক এলাকায় তীব্র পানির সংকট থাকায় স্থানীয়রা আগুন নেভাতে পর্যাপ্ত পানি পাননি। রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ জানান, আগুন নেভানোর জন্য কিছু পানির মোটর কেনা হয়েছিল, তবে সেগুলো ব্যবহার করা যায়নি এবং কিছু যন্ত্র পুড়ে গেছে ।
অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব
সাজেকের ১২৬টির মতো রিসোর্ট-কটেজের কোনোটিতেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই, এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো অগ্নিমহড়াও হয়নি। এছাড়া, অপরিকল্পিত রিসোর্ট-কটেজ নির্মাণ ও ঘনবসতির কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে ।
তদন্ত কমিটি গঠন
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. মোবারক হোসেন, এবং তাদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ।
পর্যটন নিষিদ্ধ ঘোষণা
অগ্নিকাণ্ডের পর সাজেক ভ্যালিতে পর্যটন কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ।
উপসংহার
সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আমাদের দেশের পর্যটন খাতের অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র সরবরাহ, নিয়মিত অগ্নিমহড়া এবং পরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া, স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
0 Comments