র‍্যাবের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে খসড়া আইন প্রণয়ন: স্বচ্ছতা ও মানবাধিকার রক্ষার নতুন উদ্যোগ

 

ভূমিকা

বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, র‍্যাবের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকার 'র‍্যাব আইন-২০২৪' নামে একটি খসড়া আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাহিনীটির কার্যক্রমকে আইনের আওতায় এনে মানবাধিকার রক্ষা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।​

খসড়া আইনের প্রেক্ষাপট

২০২৫ সালের পুলিশ সপ্তাহে র‍্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান জানান, বাহিনীর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে 'র‍্যাব আইন-২০২৪' খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছে। এই আইনের মাধ্যমে র‍্যাবের সদস্যদের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অনিয়ম ও অপেশাদার আচরণ প্রতিরোধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত সেলকে আরও কার্যকর করা হবে। এছাড়া, মানবাধিকার সেল গঠন করে বাহিনীর কার্যক্রমে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে ।

আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য

র‍্যাব আইন-২০২৪ প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হলো বাহিনীটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এই আইনের মাধ্যমে র‍্যাবকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার ঠেকানো, বাহিনীর সদস্যদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং মানবাধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে ।

---

বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংস্কার

র‍্যাবের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের অংশ হিসেবে মানবাধিকার সেল ও অভ্যন্তরীণ তদন্ত সেল গঠন করা হয়েছে। এই সেলগুলো বাহিনীর সদস্যদের আচরণ পর্যবেক্ষণ, অভিযোগ তদন্ত এবং প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে ।​

---

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব

র‍্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বাহিনীর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। র‍্যাব আইন-২০২৪ প্রণয়নের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করা হচ্ছে ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ

র‍্যাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে জনসাধারণের আস্থা অর্জন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, যোগাযোগ সহজীকরণ, আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা। তবে, বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা, জনবল সংকট এবং বাজেট ঘাটতি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে ।​

---

উপসংহার

র‍্যাব আইন-২০২৪ প্রণয়নের মাধ্যমে বাহিনীর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে র‍্যাবের বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ কমানো এবং বাহিনীর প্রতি জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। তবে, এই প্রক্রিয়ায় সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ নিশ্চিত করা জরুরি।