২০২৫ সালে বাংলাদেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে ভুট্টার বাম্পার ফলন কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই সাফল্য শুধু কৃষকদের আর্থিক উন্নয়নই নয়, বরং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ভুট্টা চাষে লালমনিরহাটের অগ্রগতি
লালমনিরহাট জেলা বর্তমানে বাংলাদেশের ভুট্টা উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। জেলার পাঁচটি উপজেলায়—হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর—ভুট্টা চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালে জেলায় ৩৩,০৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৫০ হেক্টর বেশি ।
চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষের সাফল্য
তিস্তা ও ধরলা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরগুলোতে ভুট্টা চাষ কৃষকদের জীবনে পরিবর্তন এনেছে। এই অঞ্চলের কৃষকরা জানান, বালুময় মাটিতে ভুট্টা চাষ করে তারা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছেন। প্রতি বিঘায় ৩৫-৪০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে, যা কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে ।
কৃষকদের অভিজ্ঞতা ও লাভ
হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষক আফজাল হোসেন জানান, উন্নত জাতের বীজ ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি প্রতি একর জমিতে ১০০-১৪০ মণ ভুট্টা পাচ্ছেন। এতে খরচ বাদে ৩৫-৪০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে ।
বাজারে ভুট্টার চাহিদা ও দাম
ভুট্টার বাম্পার ফলনের পাশাপাশি বাজারে এর চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি মণ ভুট্টা ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কৃষকদের জন্য লাভজনক । ঢাকা, কুষ্টিয়া, যশোরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা লালমনিরহাটের ভুট্টা কিনতে আসছেন, ফলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের ভূমিকা
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. শামসুজ্জামান জানান, জেলাজুড়ে ব্যাপক ভুট্টা চাষ হয়েছে এবং চরাঞ্চলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি অফিসাররা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন ।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
যদিও ভুট্টা চাষে সাফল্য এসেছে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কৃষকরা জানান, সার ও বীজের দাম বৃদ্ধি এবং ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতা তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। তবে সরকারিভাবে ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপন ও কৃষকদের ঋণ সহায়তা প্রদান করলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব।
উপসংহার
লালমনিরহাটে ভুট্টার বাম্পার ফলন কৃষি খাতে একটি সফল উদাহরণ। এই সাফল্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগে ভুট্টা চাষের এই অগ্রগতি আরও বিস্তৃত করা সম্ভব, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
0 Comments