২০২৫ সালের মে মাসে, নেট্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধানের ক্ষেতে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার (স্থানীয়ভাবে পরিচিত "কারেন্ট পোকা") পোকা ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে। এই পোকা ধানের গাছের রস শোষণ করে গাছকে দুর্বল করে তোলে, ফলে ফলন হ্রাস পায়। কৃষকরা সময়ের আগেই ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের আয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
পোকা আক্রমণের পরিমাণ ও প্রভাব
কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর উপজেলায় ২১,০৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে, যার মধ্যে ৪,৬৩০ হেক্টর হাওর এলাকায় এবং ১৬,৪৩৫ হেক্টর নন-হাওর এলাকায়। এ পর্যন্ত হাওর এলাকার ৮৫% এবং নন-হাওর এলাকার ৩০% ধান কাটা হয়েছে।
নাজিরপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, তিনি ছয় একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে দুই একর জমিতে ধান পুরোপুরি পাকতে না পারার আগেই কারেন্ট পোকা আক্রমণ করেছে, ফলে তিনি আগেভাগেই ধান কাটতে বাধ্য হয়েছেন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও পদক্ষেপ
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এই পোকা সাধারণত এমন জমিতে আক্রমণ করে যেখানে আলো ও বাতাস চলাচল কম। প্রাথমিক পর্যায়ে কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত উপজেলার শুধুমাত্র একটি ছোট অংশের জমিতে এই পোকা আক্রমণ করেছে।
কৃষি অফিস কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে এবং ৪৫% বোরো ধান ইতিমধ্যে কাটা হয়েছে। বাকি পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার পোকা সম্পর্কে তথ্য
ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার (Nilaparvata lugens) একটি মারাত্মক ধানক্ষেতের পোকা, যা ধানের গাছের রস শোষণ করে গাছকে দুর্বল করে তোলে। এই পোকা বিভিন্ন ভাইরাসও বহন করে, যা ধানের গুণমান ও ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এই পোকা সাধারণত ধানের টিলারিং থেকে ফ্লাওয়ারিং এবং শীষ গঠনের সময় আক্রমণ করে। যদি সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে এটি ১০% থেকে ৯০% পর্যন্ত ফলন হ্রাস করতে পারে।
প্রতিকার ও সুপারিশ
কৃষকদের জন্য কিছু সুপারিশ
জমিতে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা।
প্রাথমিক পর্যায়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা।
আক্রান্ত গাছ দ্রুত কেটে ফেলা।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুসরণ করা।
এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণের মাধ্যমে কৃষকরা ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং ধানের ফলন রক্ষা করতে পারবেন।
নেট্রকোনায় ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার পোকার আক্রমণ কৃষকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও কৃষকদের সচেতনতার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। সঠিক সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে কৃষকরা তাদের ফসল রক্ষা করতে পারবেন এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি কমাতে পারবেন।
0 Comments