টালিউডের জনপ্রিয় দুই তারকা অঙ্কুশ হাজরা এবং মিমি চক্রবর্তী। বহু বছর ধরে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের রসায়ন দর্শকদের আনন্দ দিয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি এক ভিডিও বা মন্তব্যকে ঘিরে চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এই দুই তারকা।
অঙ্কুশ মজার ছলে মিমিকে ‘ডাইনি’ (অর্থাৎ, জাদুকরী বা দুষ্ট নারী) বলার পর সামাজিক মাধ্যম জুড়ে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা, বিতর্ক, আবার কেউ কেউ মজা করেই নেন বিষয়টিকে। প্রশ্ন উঠছে— এটি কি নিছক বন্ধুত্বপূর্ণ ঠাট্টা, না কি এর পেছনে রয়েছে কোনো ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা ইঙ্গিত?
ঘটনার সূচনা
সম্প্রতি একটি জনপ্রিয় টক শো-এর একটি পর্বে অংশ নেন অঙ্কুশ। সেখানে উপস্থাপক তাঁকে প্রশ্ন করেন, “টালিউডের কোন অভিনেত্রীকে আপনি জাদুকরী বা অদ্ভুত ক্ষমতা সম্পন্ন বলে মনে করেন?”
উত্তরে অঙ্কুশ হাসতে হাসতে বলেন:
“মিমি তো পুরো ডাইনি। এত বছর ধরে একরকম আছে। কোনোদিনও বদলায় না, বুড়োও হয় না!”
এই মন্তব্যে দর্শকহাসির রোল পড়ে গেলেও, কিছু অংশ দর্শকের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে— এটি কি শুধুই রসিকতা?
‘ডাইনি’ শব্দের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
‘ডাইনি’ শব্দটি বাংলা ভাষায় মূলত নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহৃত হয়। যদিও অঙ্কুশের বক্তব্য ছিল মিমির সৌন্দর্য ও চিরযৌবনের প্রশংসা হিসেবে, তবুও এই শব্দের ব্যবহার ঘিরে কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য:
একজন ভক্ত লেখেন: “এমন শব্দের ব্যবহার খুবই দুঃখজনক। মজা করা যায়, কিন্তু ‘ডাইনি’ বলা উচিত হয়নি।”
অন্য একজন বলেন: “অঙ্কুশের মন্তব্য নিছকই বন্ধুত্বপূর্ণ। ওরা তো অনেকদিনের বন্ধু। এটাকে সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই।”
মিমির প্রতিক্রিয়া
মিমি নিজে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে একটি উক্তি শেয়ার করেছেন, যা অনেকেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মনে করছেন।
"যারা হাসে, তারাই সব বোঝে না। আর যারা বোঝে, তারা সব সময় হাসে না।"
এই স্টোরি ঘিরে অনেকে মনে করছেন, মিমি হয়তো এই মন্তব্যে একটু আঘাত পেয়েছেন, কিংবা অন্তত অবাক হয়েছেন।
অঙ্কুশ-মিমির সম্পর্ক: বন্ধুত্ব না অন্যকিছু?
অঙ্কুশ ও মিমির সম্পর্ক বরাবরই বন্ধুত্বপূর্ণ বলে জানা যায়। তাঁরা একাধিক সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছেন, যেমন:
‘ভিলেন’
‘কানামাছি’
‘বং কনেকশন ২’ (গুজব থাকলেও প্রকাশ পায়নি)
সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরাও করেন নিয়মিত। তবে অতীতে কয়েকবার তাঁদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির খবরও চাউর হয়েছে। সে দিক থেকে এই ‘ডাইনি’ মন্তব্যটি অনেকের চোখে পড়ে গেছে ভিন্ন আঙ্গিকে।
🎯 তারকাদের রসিকতা বনাম সামাজিক দায়বদ্ধতা
বর্তমান সময়ের তারকারা শুধু অভিনয় দিয়ে নয়, সামাজিক মাধ্যমেও নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেন। তাঁদের বলা প্রতিটি শব্দ, মন্তব্য, মজাও বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
একজন মিডিয়া বিশ্লেষক বলেন:
“মজার ছলে অনেক কথা বলা যায়, কিন্তু তারকাদের শব্দচয়ন হতে হবে আরও সচেতন। বিশেষ করে যখন সেটা একজন নারী তারকাকে নিয়ে হয়। 'ডাইনি' শব্দটি এখনো অনেক ক্ষেত্রে গালিগালাজ বা মানসিক আঘাতের প্রতীক।”
অন্যান্য সেলিব্রেটিদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর টালিউডের বেশ কয়েকজন শিল্পী বা সহকর্মী মন্তব্য করেছেন। যদিও কেউ সরাসরি কিছু বলেননি, তবে কেউ কেউ ‘বন্ধুত্বের মজা’ বলে হালকা করেছেন বিষয়টি।
অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকার বলেন:
“আমি তো জানি, অঙ্কুশ-মিমি পুরনো বন্ধু। ওদের মাঝে এমন মজা হতেই পারে। এটা নিয়ে বাড়তি আলোচনার প্রয়োজন নেই।”
সোশ্যাল মিডিয়ার রিঅ্যাকশন ও মিম ট্রেন্ড
এই মন্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর ফেসবুক, টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে একাধিক মিম তৈরি হয়। বিশেষ করে—
“ডাইনি মিমি বনাম ভিক্টিম অঙ্কুশ”
“মিমির চিরযৌবনের রহস্য: ডাইনি কিনা যাচাই চলবে!”
এই মিমগুলো আবার নতুন করে মজার আবহ তৈরি করে।
সময়ের প্রেক্ষাপট: নির্বাচন ও জনপ্রিয়তা
উল্লেখ্য, মিমি চক্রবর্তী বর্তমানে একজন সংসদ সদস্য এবং বেশ কিছুদিন ধরেই অভিনয়ের চেয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজে বেশি যুক্ত। তাই তাঁর নাম ঘিরে যেকোনো মন্তব্য রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে।
এই বক্তব্যে কেউ কেউ রাজনৈতিক রঙ খুঁজছেন বলেও জানা যাচ্ছে, যদিও এর কোনো ভিত্তি এখনো মেলেনি।
উপসংহার
সেলেব্রিটিদের মধ্যে মজার ছলে ঠাট্টা করা নতুন কিছু নয়। তবে ‘ডাইনি’ শব্দটি যতটা হালকা মনে হোক, তা সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট সংবেদনশীল। অঙ্কুশের মন্তব্যের পিছনে অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যই ছিল— সেটা তাঁর হাসি-ঠাট্টা থেকেই বোঝা যায়। কিন্তু আজকের দিনে, যখন প্রতিটি শব্দ ভাইরাল হয়ে যায়, তখন এসব শব্দচয়নে আরও সচেতনতা কাম্য।
এখন দেখার বিষয়, মিমি কী এ নিয়ে কোনো পরিষ্কার প্রতিক্রিয়া দেন, না কি বিষয়টি সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যায় তারকাদের আরও নতুন কোনো মজায়।
0 Comments