Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

 


নোয়াখালী, ২৯ মে ২০২৫ —
নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে গত দুই দিন ধরে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন নিচু এলাকায় পানি জমে গেছে এবং নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থেকে শুরু করে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর সঙ্গে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বইছে।

নদী ও খালপাড়ে পানি বৃদ্ধি

নোয়াখালী জেলার হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় নদী ও খালপাড়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হাতিয়ার চরমার্টিন, সুন্দরীঘাট ও নলচিরা এলাকায় স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হাওয়ার তীব্রতা বেড়ে গেলে জোয়ারের সময় পানি ঘরে ঢোকার আশঙ্কা দেখা দেয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন:

"সকাল থেকে বৃষ্টি থামেনি। নদীর পানি অনেক বেড়ে গেছে। অনেকেই আশঙ্কায় আছেন যে রাতে যদি জোয়ার বাড়ে, তবে ঘরে পানি ঢুকে পড়বে।"

 নিম্নচাপের প্রভাব

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হলে এটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা আপাতত নেই। যদিও সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. বজলুর রশিদ জানান:

“উপকূলীয় অঞ্চলে ২-৪ দিন এমন বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে। কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা রয়েছে।”

সতর্কতা ও প্রশাসনের প্রস্তুতি

জেলা প্রশাসন জানায়, বৃষ্টির কারণে কোনো স্থায়ী ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. ইকবাল হোসেন বলেন:

“আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কৃষিতে শঙ্কা

এদকে বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমায় কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমন ধানের বীজতলা, সবজি ক্ষেত ও শাকসবজির চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম বলেন:

“এত দিন বৃষ্টি ছিল না, এখন আবার অতিরিক্ত বৃষ্টি হচ্ছে। জমিতে পানি দাঁড়িয়ে গেছে। যদি বৃষ্টি না থামে, তাহলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।”

 জোয়ারে প্লাবনের আশঙ্কা

উপকূলবর্তী এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোর অবস্থা ভালো না হওয়ায় জোয়ারের সময় প্লাবনের শঙ্কা আরও বেড়েছে। নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন:

“আমরা বাঁধগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছি। কোথাও যদি ফাটল দেখা দেয়, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


করণীয় ও সতর্কবার্তা

সাধারণ জনগণকে পরামর্শ:

অপ্রয়োজনে নদী বা জলাশয়ের কাছাকাছি না যাওয়া

ঘরবাড়ির চারপাশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা

প্রয়োজনীয় ওষুধ, শুকনো খাবার ও পানি সংরক্ষণ করে রাখা

সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করা


উপসংহার

নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ার প্রভাবে জনজীবন কিছুটা বিপর্যস্ত হলেও এখনো বড় ধরনের দুর্যোগ দেখা দেয়নি। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং নদী-পানির পরিস্থিতি দেখে আগামী কয়েক দিন সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন তৎপর রয়েছে, তবে স্থানীয়দের উচিত স্বপ্রণোদিতভাবে নিরাপদ অবস্থানে সরে যাওয়া ও প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা।

Post a Comment

0 Comments