নাজিয়া হক অর্ষা — বাংলাদেশের বিনোদন জগতে পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি নাম। তার অভিনয় দক্ষতা, ব্যক্তিত্ব এবং আন্তরিকতা তাকে দর্শকদের কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তবে সম্প্রতি তার জীবনে নেমে এসেছে এক গভীর দুঃখের ছায়া। অর্ষা হারিয়েছেন তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে — তার মা মাসুদা হককে।
মাসুদা হক শুক্রবার (২০ জুন) রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছরের বেশি। জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিল রোগে ভুগছিলেন এবং সঙ্গে ছিল অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। এই দুটি অসুখই ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থাকে দুর্বল করে দেয় এবং অসংখ্যবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে যথাযথ চিকিৎসা এবং সেবাযত্নের সবরকম চেষ্টা চালানো হলেও শেষ পর্যন্ত মায়ের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
অর্ষা এবং তার পরিবারের কাছে এটি এক অসহনীয় ক্ষতি। মায়ের প্রতি সন্তানের গভীর ভালোবাসা এবং সেবায় কোনো কমতি রাখেননি অভিনেত্রী অর্ষা, তা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট এবং সাক্ষাৎকারে তিনি আগেও উল্লেখ করেছেন। মায়ের অসুস্থতা চলাকালীন, ব্যস্ত শিডিউল সত্ত্বেও অর্ষা নিয়মিত তার পাশে থেকেছেন এবং মায়ের চিকিৎসায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
অর্ষার স্বামীও শোক প্রকাশ করে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার কিছু দিক নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। তার অভিযোগ, হাসপাতালে যথাযথ নজরদারি এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় হয়তো পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি, তবে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে রোগীর স্বজনদের মধ্যে চিকিৎসাসেবায় বিদ্যমান নানা অনিয়মের অভিযোগ নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
এ ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে অর্ষা এবং তার পরিবারের প্রতি অসংখ্য ভক্ত, বন্ধু এবং সহকর্মী শোক এবং সমবেদনা জানিয়েছেন। অনেকেই লিখেছেন, মায়ের মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি, যা ভাষায় প্রকাশের অতীত। তারা অর্ষাকে সাহসী থাকার অনুরোধ করে বলেছেন, তার মায়ের আত্মা যেন শান্তি পায় এবং অভিনেত্রী যেন এই শোক শক্তভাবে মোকাবিলা করতে পারেন।
নাজিয়া হক অর্ষা বাংলাদেশের নাটক এবং বিজ্ঞাপন জগতের একজন মেধাবী শিল্পী হিসেবে নিজের জায়গা পাকা করেছেন। তার কাজ এবং নিবেদিতপ্রাণ মনোভাব তাকে অনেকের অনুপ্রেরণায় পরিণত করেছে। এখন দর্শক এবং শুভানুধ্যায়ীরা আশা করছেন, ব্যক্তিগত জীবনের এই গভীর শোক কাটিয়ে উঠে খুব শিগগিরই তিনি আবার তার প্রিয় অভিনয় ক্যারিয়ারে ফিরবেন।
সন্তান হিসেবে মায়ের প্রতি ভালোবাসা, দায়িত্ব এবং শ্রদ্ধা – অর্ষা তার জীবনে তা পূর্ণ করেছেন। এখন তার মা না থাকলেও তার শিক্ষা এবং স্নেহের ছায়া চিরকাল অর্ষার সঙ্গে থাকবে, যা তাকে জীবনের পথে শক্তি যোগাবে। মৃত্যুর এই দুঃখজনক অধ্যায় মেনে নেওয়া সহজ নয়, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই বেদনা প্রশমিত হয়ে অর্ষার জীবনে নতুন প্রেরণা এবং সাহস হয়ে ফিরবে — এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তার অসংখ্য ভক্ত এবং অনুরাগী।
পরিশেষে, অর্ষা এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং প্রার্থনা রইল যেন তারা এই কঠিন সময়ে মানসিকভাবে শক্ত থাকেন এবং তার মায়ের আত্মা অনন্ত শান্তি লাভ করে।
0 Comments