বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক এক অধ্যায়। কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত এই টেস্টে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে ইনিংস ও ৭৮ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয়। ফলে দুই ম্যাচের সিরিজটি ১–০ ব্যবধানে জিতে নেয় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা, বোলিংয়ের দুর্বলতা এবং ফিল্ডিংয়ে অনিয়ম এই হারের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করে ৪৫৮ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায়। দলটির ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন এবং ১৫৮ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন। তাঁর এই ইনিংস ছিল ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় শতক এবং এর মাধ্যমে তিনি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন। এছাড়া দিনেশ চান্দিমাল ৯৩ এবং কুসাল মেন্ডিস ৮৪ রান করেন। বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে কেউই উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেতে পারেননি। ফলে শ্রীলঙ্কা শুরুতেই ম্যাচে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৪৭ রানে গুটিয়ে যায়। ব্যাটারদের মধ্যে শাদমান ইসলাম সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন, যা দলের দুরবস্থার প্রতিফলন। শ্রীলঙ্কার আসিথা ফার্নান্দো এবং সোনাল দিনুশা যথাক্রমে তিনটি করে উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে বড় স্কোর গড়তে বাঁধা দেন। ফলে প্রথম ইনিংসে ২১১ রানের বিশাল লিড নিয়ে আত্মবিশ্বাসী শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেয়।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস ছিল আরও করুণ। ওপেনার আনামুল হক ও শাদমান ইসলাম দ্রুত ফিরে গেলে চাপের মুখে পড়ে মিডল অর্ডার। লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম ও শান্ত দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলেন। এই ইনিংসে প্রভাত জয়াসুরিয়া ৫৬ রানে ৫ উইকেট তুলে নেন। তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি ছিল দ্বাদশ পাঁচ উইকেট প্রাপ্তি। ডি সিলভা ২টি উইকেট নিয়ে তার স্পিন বোলিংয়ের দাপট দেখান। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস ১৩৩ রানে গুটিয়ে গেলে ম্যাচটি শেষ হয় এবং শ্রীলঙ্কা ইনিংস ও ৭৮ রানে জয়লাভ করে।
এই টেস্ট হারের পর টেস্ট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, দলের উন্নতির জন্যই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মতে, দলে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন এবং এটি দলের ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে। শান্তর অধিনায়কত্ব ছাড়ার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের টেস্ট দলের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এনে দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ এখন আগামী ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের দিকে তাকিয়ে আছে। সিরিজ জয়ের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস অর্জন ও দলের পুনর্গঠন এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। এ পরাজয় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে দুর্বলতা ও মানসিক প্রস্তুতির অভাবকে প্রকাশ করেছে, যা দলকে ভবিষ্যতে কাটিয়ে উঠতে হবে।
এই হারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড, কোচিং স্টাফ এবং খেলোয়াড়দের জন্য এটি হতে পারে একটি নতুন শিক্ষা। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের অধীনে সামনের সিরিজগুলোতে আরও প্রতিযোগিতামূলক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
0 Comments