Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

সচিবালয়ে কর্মচারীদের মিছিল

 


পটভূমি

বাংলাদেশের সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-তে সংশোধন এনে 'সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই অধ্যাদেশে কিছু ধারাকে 'নিবর্তনমূলক' ও 'কালাকানুন' আখ্যা দিয়ে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের দাবি, এই অধ্যাদেশ তাদের মৌলিক অধিকার খর্ব করবে এবং কর্মকর্তাদের হাতে কর্মচারীরা নিপীড়নের শিকার হবেন।


 আন্দোলনের সূচনা ও বিস্তার

রোববার, ১ জুন ২০২৫, সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ের বাদামতলা চত্বরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা সমবেত হন। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের নেতৃত্বে তারা মিছিল করে খাদ্য ও আইন উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে যান। তারা ঘোষণা দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে

 অধ্যাদেশের বিতর্কিত ধারা

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীরা যদি অনানুগত্যমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত হন, ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, বা অন্যদের কর্তব্য পালন থেকে বিরত থাকতে উসকানি দেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এই শাস্তির মধ্যে চাকরি থেকে অপসারণ, নিম্নপদে নামিয়ে দেওয়া, বা বরখাস্ত করার বিধান রয়েছে

কর্মচারীদের অভিযোগ, এই ধারা তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার হরণ করবে এবং কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ সৃষ্টি করবে।


আন্দোলনকারীদের বক্তব্য

আন্দোলনকারীরা অধ্যাদেশকে 'কালো আইন' আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি ১৯৭৯ সালের বাতিল হওয়া বিশেষ বিধানের পুনরুজ্জীবন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই আইন বাস্তবায়িত হলে কর্মচারীরা কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়বেন এবং তাদের মৌলিক অধিকার খর্ব হবে 

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবির বলেন, "সরকার দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বাতিল হওয়া ১৯৭৯ সালের সরকারি চাকরি (বিশেষ বিধান) আইন পুনরায় প্রণয়ন করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে নাগরিক হিসেবে কর্মচারীরা তাদের মৌলিক অধিকার হারাবে।"


 প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

আন্দোলনকারীরা আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে দেখা করতে গেলে জানতে পারেন তিনি অফিসে আসেননি। পরে তারা আইন সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের আপত্তির বিষয়গুলো তুলে ধরেন। আইন সচিব তাদের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং যৌক্তিক দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দেন।

পরে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সিনিয়র সচিব বলেন, "কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়া কোনো ধরনের অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হবে না।" এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন


 আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ

আন্দোলনকারীরা ঘোষণা করেছেন, অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তারা বলেন, "যখন মাঠে নেমেছি, তখন দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরব।" তারা সরকারের তিন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন


 উপসংহার

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ নিয়ে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। তাদের দাবি, এই অধ্যাদেশ তাদের অধিকার খর্ব করবে এবং কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে, প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। এই পরিস্থিতিতে, উভয় পক্ষের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানো জরুরি।


Post a Comment

0 Comments