২০২৫ সালের ৪ জুন, ইসলামাবাদের একটি আদালত টিকটক তারকা সানা ইউসুফ হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন ওমর হায়াতকে ১৪ দিনের জুডিশিয়াল রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। এই রিমান্ডের উদ্দেশ্য হলো সন্দেহভাজনের শনাক্তকরণ প্যারেড (identification parade) সম্পন্ন করা, যা সানার মা ও খালার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হবে।
আদালতের কার্যক্রম
বুধবার, ৪ জুন, ফেডারেল পুলিশ ২২ বছর বয়সী ওমর হায়াতকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ শেহজাদ গোন্ডালের আদালতে হাজির করে। শুনানির শুরুতে প্রসিকিউটর ও জেলা পাবলিক প্রসিকিউটরের অনুপস্থিতিতে বিচারক অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং শুনানি সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। পরে জেলা প্রসিকিউটরের উপস্থিতিতে শুনানি পুনরায় শুরু হয় এবং তদন্তের স্বার্থে সন্দেহভাজনকে ১৪ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। এ সময় সিনেটর ফালাক নাজ আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন ।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণ
সানা ইউসুফ, ১৭ বছর বয়সী একজন টিকটক ইনফ্লুয়েন্সার, যিনি চিত্রাল অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও নারীদের শিক্ষা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতেন, ২ জুন ইসলামাবাদের জি-১৩ সেক্টরে তার বাসায় গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২২ বছর বয়সী বেকার যুবক ওমর হায়াত বারবার সানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সানা তা প্রত্যাখ্যান করায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। ঘটনার ২০ ঘণ্টার মধ্যে ফয়সালাবাদ থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় সানার মোবাইল ফোন ও হত্যার অস্ত্রও জব্দ করা হয় ।
তদন্তের অগ্রগতি
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পর প্রমাণ নষ্ট করার জন্য অভিযুক্ত সানার ফোনটি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। তাকে গ্রেফতারের জন্য তিনটি শহরের ১১টি স্থানে অভিযান চালানো হয়। পুলিশ এখন সন্দেহভাজনের সহযোগীদের খুঁজছে এবং হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎস অনুসন্ধান করছে। তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, সানার মা ও খালা বর্তমানে চিত্রালে অবস্থান করছেন এবং তাদের উপস্থিতিতে শনাক্তকরণ প্যারেড সম্পন্ন করা হবে ।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
সানা ইউসুফের হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই এ ঘটনাকে নারীর নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছেন এবং অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। সানা তার জন্মদিনের কয়েক ঘণ্টা আগে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি পোস্ট করেছিলেন, যা তার অনুসারীদের মধ্যে আরও শোকের সৃষ্টি করেছে ।
উপসংহার
সানা ইউসুফের হত্যাকাণ্ড একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা, যা সমাজে নারীদের নিরাপত্তা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় নারীদের প্রতি সহিংসতার বিষয়টি সামনে এনেছে। এই মামলার দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত নিষ্পত্তি কেবল সানার পরিবারের জন্য সান্ত্বনার বিষয় হবে না, বরং তা সমগ্র সমাজের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে কাজ করবে—নারী বা কিশোরীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্র কতটা প্রস্তুত এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ জুন নির্ধারিত হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে তা জানানো হবে।
0 Comments