Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

এফডিসিতে রামদা হাতে ঢুকে শাকিব খানকে খুঁজছিলেন যুবক!


 ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) হঠাৎ করেই যেন রূপ নিল আতঙ্কের দুর্গে। গত শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, বিকেলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ একটি ঘটনায় চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষসহ সাধারণ নাগরিকরাও বিস্ময়ে হতবাক। কারণ, প্রকাশ্য দিবালোকে একজন যুবক রামদা হাতে প্রবেশ করেন বিএফডিসি চত্বরে এবং দাবি করেন, তিনি খুঁজছেন ঢালিউডের সুপারস্টার শাকিব খানকে!

‍🔺 হামলার ধরণ

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, শনিবার দুপুরের দিকে এক অজ্ঞাত যুবক এফডিসির মূল ফটক দিয়ে হঠাৎই প্রবেশ করেন। তার হাতে একটি ধারালো রামদা ছিল। প্রবেশ করেই তিনি উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলতে থাকেন, “শাকিব খান কোথায়? ওকে আজ দেখে ছাড়বো না!” মুহূর্তেই এফডিসির ভেতর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মচারীরা ভীত হয়ে দিকবিদিক ছুটে যান।

এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এফডিসির দুটি কক্ষ ও একটি প্রাচীরঘেঁষা শেড। যুবকটি ভাংচুর চালিয়ে কয়েকটি জানালা ও দরজা ভেঙে ফেলেন। এ সময় বিএফডিসির কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করেন। কিছু লোক মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করলেও যুবকের রণমূর্তি দেখে অনেকেই নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেন।

👮 পুলিশি হস্তক্ষেপ ও আটক

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার একটি পুলিশ টহল দল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে যুবক পালানোর চেষ্টা করেন। তবে তৎপর পুলিশের হাতে ধরা পড়েন কিছুক্ষণের মধ্যেই। পুলিশের হাতে ধরা পড়া যুবকের নাম মানিক মিয়া, যিনি প্রথমিকভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘটনার বিষয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন,

“অভিযুক্ত মানিক মিয়াকে আমরা ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছি। তার হাতে একটি ধারালো রামদা ছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কেন সে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।”

🤔 লক্ষ্যবস্তু শাকিব খান?

ঘটনার সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক ছিল যুবকের বারবার শাকিব খানের নাম উচ্চারণ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এফডিসিতে ঢুকেই সে বলছিল, “ওই শাকিবকে আজ শিখিয়ে দেব। আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে!” বিষয়টি আরও আতঙ্কজনক হয়ে ওঠে যখন অনেকে ধারণা করেন, এটি কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ হতে পারে।

তবে ঘটনার সময় শাকিব খান এফডিসিতে ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। এই অভিনেতার পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

📽️ চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনা চলচ্চিত্র অঙ্গনে নানাভাবে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বলছেন, এটি নিছক কোনো পাগল যুবকের কাণ্ড নয়, বরং এর পেছনে হয়তো অন্য কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিল্পীরা নিরাপত্তাহীনতা প্রকাশ করে বলেন, “যেখানে দেশের সবচেয়ে বড় ফিল্ম ইন্সটিটিউশনে রামদা হাতে কেউ ঢুকে পড়তে পারে, সেখানে আমরা নিরাপদ বোধ করব কীভাবে?”

চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার বলেন,

“এটা আসলেই উদ্বেগজনক। শাকিব খান তো দেশের সম্পদ। তাকে যদি কেউ এভাবে খুঁজে বেড়ায় মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে, তাহলে প্রশ্ন ওঠে – নিরাপত্তা কোথায়?”

অন্যদিকে, চিত্রপরিচালক সমিতি ও প্রযোজক সমিতিও ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তদন্ত দাবি করেছেন।

🧠 মানসিক সমস্যা, না পরিকল্পিত হামলা?

আটক যুবক মানিক মিয়া কি সত্যিই মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন? নাকি তিনি কোনো পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন? পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে তার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্নতা পাওয়া গেছে। তবে পুরো বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানতে মানসিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে মেডিকেল টেস্টের আয়োজন করা হতে পারে।

তবে একটি প্রশ্ন এখনো সকলের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে – কেন শাকিব খান? তার প্রতি এত ক্ষোভ কেন? এটা ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ, নাকি কোনো গোপন চক্রান্ত?

🛡️ বিএফডিসির নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশ্ন

এফডিসির মতো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে এভাবে একজন যুবকের অনায়াসে প্রবেশ করে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটানো নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতাকেই নির্দেশ করে। এ ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে আবারও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ।

তাদের ভাষ্যমতে, “আমরা আগেও নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু এবার ঘটনার ভয়াবহতা দেখে আমরা পুরো বিএফডিসি কমপ্লেক্সে নিরাপত্তা ক্যামেরা, বাড়তি গার্ড ও প্রবেশপথে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করব।”

উপসংহার

ঘটনাটি নিছক একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে, আবার একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রেরও অংশ হতে পারে – এখনো কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে এটি পরিষ্কার, ঢালিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা শাকিব খানকে ঘিরে এমন ঘটনা শুধু তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকেই নয়, গোটা ইন্ডাস্ট্রির নিরাপত্তাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

জনগণ, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এবং শাকিব খান ভক্তরা চাচ্ছেন এই ঘটনার পেছনের কারণ উন্মোচিত হোক এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

Post a Comment

0 Comments