Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে যেসব খাবার খাবেন

 


থাইরয়েড (Thyroid) একটি গুরুত্বপূর্ণ অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি যা শরীরের বিপাক, ওজন, তাপমাত্রা, হৃদস্পন্দন এবং শক্তি ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম) শরীরে নানা ধরনের সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তবে সঠিক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।

নিচে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাবার তালিকাভুক্ত করা হলো:


থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক খাবারসমূহ

১. আয়োডিনযুক্ত খাবার (Iodine-rich foods)

আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য অপরিহার্য। আয়োডিনের অভাব হাইপোথাইরয়েডিজমের একটি বড় কারণ।

খাবার:

  • আয়োডাইজড লবণ

  • সামুদ্রিক মাছ (টুনা, সালমোন)

  • সামুদ্রিক শৈবাল (Seaweed)

  • দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য

⚠️ হাইপারথাইরয়েডিজম থাকলে অতিরিক্ত আয়োডিন খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।


২. সেলেনিয়ামসমৃদ্ধ খাবার (Selenium-rich foods)

সেলেনিয়াম থাইরয়েড হরমোন সক্রিয় করতে সাহায্য করে এবং থাইরয়েড গ্রন্থিকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

খাবার:

  • ব্রাজিল নাটস (Brazil nuts)

  • সূর্যমুখী বীজ

  • মাছ (সার্ডিন, টুনা)

  • ডিম

  • ব্রাউন রাইস


৩. জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার (Zinc-rich foods)

জিঙ্ক হরমোন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

খাবার:

  • মাংস (গরু, মুরগি)

  • চিংড়ি মাছ

  • ডিম

  • বাদাম

  • ডাল ও মসুর


৪. ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন ডি থাইরয়েড ফাংশন এবং ইমিউন সিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

খাবার:

  • ডিমের কুসুম

  • তেলযুক্ত মাছ

  • দুধ ও ফোর্টিফাইড দুধজাত পণ্য

  • সূর্যের আলো (প্রাকৃতিক উৎস)


৫. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাইরয়েড গ্রন্থিকে ফ্রি র‍্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে।

খাবার:

  • বেরি (ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি)

  • সবুজ চা

  • গাজর

  • ব্রকলি

  • পালংশাক

  • হলুদ (কারকিউমিন উপাদান)


৬. প্রোবায়োটিক খাদ্য

গাট হেলথ ভালো থাকলে থাইরয়েড কার্যকারিতা উন্নত হয়।

খাবার:

  • দই (যথাসম্ভব চিনি ছাড়া)

  • কেফির

  • আচার (প্রাকৃতিক ফার্মেন্টেড)

  • ছানা


এড়িয়ে চলা উচিত যেসব খাবার

১. গোয়িট্রোজেনিক খাবার (Goitrogens)

এই খাবারগুলো থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে বাধা দিতে পারে, বিশেষ করে কাঁচা খেলে।

যেমন:

  • কাঁচা বাঁধাকপি

  • ব্রকলি

  • ফুলকপি

  • সোয়া (soy)

তবে সেদ্ধ করে খেলেও সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।

২. অতিরিক্ত চিনি ও প্রসেসড ফুড

  • কেক, বিস্কুট, সফট ড্রিংকস

  • ফাস্ট ফুড

  • অতিরিক্ত ভাজা খাবার

৩. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল

অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল থাইরয়েডের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।


💡 কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

  • থাইরয়েড রোগীর খাদ্য তালিকা তৈরি করার সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

  • নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

  • অতিরিক্ত আয়োডিন, সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিন।


✅ উপসংহার:

থাইরয়েড হরমোন ভারসাম্য রক্ষার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক ও প্রোবায়োটিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আপনি প্রাকৃতিকভাবে থাইরয়েড সুস্থ রাখতে পারেন। তবে হাইপার বা হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলে কোনো খাদ্য পরিকল্পনার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Post a Comment

0 Comments