নগর ভবনে ‘রাজনীতির খেলা’: ভোগান্তিতে ঢাকা দক্ষিণের বাসিন্দারা

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবন, জনদুর্ভোগ ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন

মেয়র পদে শপথ গ্রহণ না করায় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ১৪ মে থেকে নগর ভবন অবরুদ্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান ফটকসহ সব প্রবেশপথে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন তার সমর্থকরা এবং ডিএসসিসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। এর ফলে নগর ভবনে পাওয়া যায়নি অফিসে প্রবেশ, ফলে সাড়া দিয়েছে নাগরিক সেবায় ব্যাপক ব্যাঘাত । চলমান আন্দোলনের কারণে প্রায় ২৮ ধরনের সরকারি সেবা–ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়, ওয়ারিশ ও চারিত্রিক সনদসহ—অব্যাহত রয়েছে ।

দিনের পর দিন এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় ঢাকা দক্ষিণের প্রায় সওয়া কোটি বাসিন্দা প্রশাসনিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । একটি অফিসিয়াল সূত্র বলছে, প্রতিদিন প্রায় ৫,০০০–৭,০০০ মানুষ এসব সেবার জন্য নগর ভবন ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে আসেন, কিন্তু বন্ধ দরজার মুখে ফিরে যান । এমনকি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি, ব্যক্তিগত পাসপোর্ট, হাসপাতালের জরুরি কার্যক্রম—সব ক্ষেত্রেই জনজীবনে দৃশ্যমান ব্যাঘাত দেখা দিয়েছে ।

বর্তমানে ভোগান্তি শুধু প্রশাসনিক নয়, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণেও সংকটে ফেলা করেছে। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, মশা প্রজনন এবং ডেঙ্গু-করোনা ঝুঁকিযুক্ত এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে—কারণ মশা নিধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে । একজন বাসিন্দা জানান: “মশার ওষুধ ঠিকমতো ছিটানো হচ্ছে না, আতঙ্কে আছি”—এই অবস্থা বিরামহীন থাকার ফলে মানবিক ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের সম্ভাবনা বেড়েই চলছে।

রাজনীতির সহিংসতায় আজ ঢাকা দক্ষিণ একটি আবেগঘন অস্থিতিশীলতার মুখে দাঁড়িয়েছে। একদিকে ইশরাক তার শপথ দাবি কেন্দ্র করে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরাসরি টক্কর দিচ্ছেন । অন্যদিকে আসিফ দাবি করেন—“ইশরাক ফৌজদারি অপরাধ করছেন” এবং সরকার সহজভাবে পরিস্থিতি বদলে দেবে । ইশরাক পাল্টা বলেন, শপথ না নিয়ে সরকার আইন লঙ্ঘন করছে এবং তারা জরুরি সেবা চালু রেখেছেন; অন্য কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা হয়েছে একটি “চিহ্নমাত্র” হিসেবে ।

জনগণের ভোগান্তি বাড়লেও সরকারের তৎপরতা সীমিত—তবে এখন নাগরিক সেবা চালুর লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে । সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, এই সমস্যায় “আর বসে থাকা যায় না” এবং দ্রুত সমাধান আনা হবে ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—ইশরাকের দাবি ও সরকারের প্রতিক্রিয়ার মধ্যেকার দ্বন্দ্ব এ ইস্যুকে নিজের সীমা পেরিয়ে জাতীয় ইস্যুতে রূপান্তরিত করেছে । বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন—রাজনৈতিক প্রত্যাশা এখন নাগরিক সেবার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে পারে ।

আইনগত দিক থেকে ইশরাকের মেয়র পদে শপথ না নেয়া, নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হওয়া এবং আদালতের নির্দেশে গেজেট জারি করলেও, এসব উপেক্ষা করে সরকার ও জনপ্রতিনিধির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদের মতে, শপথ না নিয়ে দায়িত্ব পালন আইন লঙ্ঘন—এতে কর্মচারীরাও অংশ নিয়ে তাদের নিয়োগ শঙ্কাযুক্ত হচ্ছে