বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া সম্প্রতি একটি নাটকীয় ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। ২০২৫ সালের ১৮ মে, তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাইল্যান্ড যাওয়ার প্রস্তুতিকালে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় দায়ের করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল।
গ্রেপ্তারের পটভূমি
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ঢাকার ভাটারা এলাকায় এনামুল হক নামে একজন ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নুসরাত ফারিয়া সহ ১৭ জন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে ফারিয়ার আইনজীবীরা আদালতে জানান, ঘটনার সময় তিনি কানাডায় অবস্থান করছিলেন।
কারাগারে প্রেরণ ও জামিন
গ্রেপ্তারের পরদিন, ১৯ মে, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০ মে আদালত তাকে ৫,০০০ টাকা মুচলেকায় জামিন প্রদান করেন।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিক্রিয়া
নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেন, "আমরা যারা অভিনয় করে খাই, মঞ্চ নাটক করি, মাঝে মাঝে সত্য উচ্চারণ করি— সেই অপরাধে আমাদের এমনভাবে মামলা দিয়ে হেনস্থা করতে হবে?"
অভিনেত্রী আজমেরি হক বাধন বলেন, "এই মেয়েটির কোনো দোষ নেই। সে মোটেই দায়ী নয়। যারা ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, তাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।"
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিতর্ক
নুসরাত ফারিয়া ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'মুজিব: দ্য মেকিং অব আ নেশন' চলচ্চিত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে তার ভূমিকা এবং পরবর্তীতে দেওয়া কিছু বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।
মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ
মানবাধিকার সংগঠনগুলিও এই ঘটনার বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন বলেন, "তাকে কাজের জন্য খেসারত দিতে হবে, এটা মানা যায় না। তাকে এক ধরনের শাস্তি দেয়া হচ্ছে।"
উপসংহার
নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার ও জামিনের ঘটনা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনা শুধু একজন অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, বরং এটি বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার প্রশ্নও উত্থাপন করে।
0 Comments