বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে আলোচিত নাম চিত্রনায়িকা পরীমনি। তিনি তার অভিনয় দক্ষতা, রূপলাবণ্য ও ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে সবসময়ই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় থাকেন। তবে ২০২৫ সালের মে মাসে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তাকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে এনে দাঁড় করায় – সেটি হলো তার মৃত্যুর গুজব।
এই গুজব শুধু তার ভক্তদের নয়, বরং পুরো বিনোদন জগতকেই নাড়া দিয়েছে। আসুন জেনে নেই পুরো ঘটনার পেছনের কাহিনি এবং এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পরীমনির স্পষ্ট ও সাহসী প্রতিক্রিয়া।
গুজবের শুরু: ফেসবুকে ‘পরীমনির মৃত্যু’ ছড়িয়ে পড়ে
২০২৫ সালের ২০ মে তারিখে হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি চাঞ্চল্যকর খবর ছড়িয়ে পড়ে – “পরীমনি আর নেই।” কেউ একজন ফেসবুকে লিখে দেন যে পরীমনি মারা গেছেন। সাথে সাথে এ গুজব ছড়িয়ে পড়ে রীতিমত আগুনের মতো।
বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে 'RIP Porimoni' লেখা স্ট্যাটাস, ছবিসহ পোস্ট, এবং কিছু ইউটিউব চ্যানেল এমনকি 'Breaking News' শিরোনামে ভিডিওও ছাড়তে শুরু করে। অনেকেই না জেনে বা যাচাই না করেই এই খবর শেয়ার করতে থাকেন।
এই মিথ্যা খবর দেখে তার অসংখ্য ভক্ত, সহকর্মী এবং সাধারণ মানুষ হতবাক হয়ে পড়েন। ফোনে, মেসেজে, ইনবক্সে – হাজার হাজার মানুষ খোঁজ নিতে থাকেন, সত্যিই কি পরীমনি মারা গেছেন?
পরীমনির লাইভ: “আমি বেঁচে আছি, শুটিং করে ফিরেছি”
পরীমনি প্রথমে কিছুটা অবাক হন এই ভুয়া খবরে। তিনি সারাদিন শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন, এবং সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যখন ফোন হাতে নেন, তখন শত শত কল, মেসেজ ও ইনবক্সে তিনি দেখতে পান এই গুজবের প্রতিক্রিয়া।
তৎক্ষণাৎ ফেসবুক লাইভে এসে তিনি জানান,
"আমি ঠিক আছি, সুস্থ আছি। সকালে শুটিংয়ে গিয়েছিলাম। সারা দিন কাজ করেছি। বাসায় ফিরে ফোন হাতে নিয়ে যখন দেখি – আমাকে নিয়ে RIP পোস্ট! আমি তো হকচকিয়ে গেছি। আমার ছেলেটা তো বাসায় আছে, ওর কি হবে?"
তিনি আরও বলেন:
"এটা মজা করার বিষয় না। কেউ মারা গেছে কিনা, সেটা যাচাই না করে এমনভাবে গুজব ছড়ানো অমানবিক। একজন মানুষ বেঁচে আছেন না মরে গেছেন, সেটা নিয়ে রসিকতা না করাই ভালো।"
ভুয়া সংবাদের সামাজিক প্রভাব
এই ঘটনা কেবল একটি গুজব নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ও ভুয়া খবরের ছড়িয়ে পড়া কতটা বিপজ্জনক হতে পারে – তার একটি বাস্তব উদাহরণ। একজন জীবিত মানুষের মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়ানো কেবল দায়িত্বহীনতা নয়, এটি নৈতিক অপরাধও।
গুজব ছড়ানোর ফলে শুধু পরীমনিই নয়, তার পরিবার, সহকর্মী এবং ছোট ছেলেটিও মানসিকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। এটি তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যকেও বিঘ্নিত করেছে।
পরীমনির প্রতিবাদ: প্রতিবাদে সাহসিকতা
এই ঘটনার মাধ্যমে পরীমনি আবারও প্রমাণ করলেন যে তিনি কেবল একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নন, বরং একজন সচেতন ও শক্তিশালী মানুষ, যিনি নিজের সম্মান ও সত্যের পক্ষে প্রতিবাদ জানাতে জানেন।
তিনি বলেন:
"মৃত্যু তো আমার হাতে নেই। সেটা মহান আল্লাহ ঠিক করবেন। আমি শুধু চাই, স্বাভাবিকভাবে যেন মৃত্যু হয়। কিন্তু এমন ভুয়া মৃত্যুর খবর মানতে পারি না।"
তার সাহসিক মন্তব্যে ও লাইভ ভিডিওতে গুজব অনেকটা স্তিমিত হয়। অনেক ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল তাদের পোস্ট মুছে দেয় অথবা সংশোধন করে।
মিডিয়া ও সাধারণ মানুষের দায়িত্ব
এই ঘটনার মাধ্যমে একটি বড় প্রশ্ন উঠে আসে – আমরা কীভাবে খবর যাচাই না করেই বিশ্বাস করে ফেলি?
সোশ্যাল মিডিয়া এখন এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে একজন সাধারণ ব্যক্তি মুহূর্তেই ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিতে পারে, আর হাজার হাজার মানুষ সেটি বিশ্বাস করে ফেলে।
এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
তথ্য যাচাই না করে কোনো খবর শেয়ার করা উচিত নয়।
বিশেষ করে যখন সেটা কাউকে জীবিত না মৃত দেখানোর মতো স্পর্শকাতর বিষয় হয়, তখন আরও সতর্ক থাকা জরুরি।
সংবাদ মাধ্যম ও অনলাইন কনটেন্ট নির্মাতাদের উচিত যথাযথ তথ্য নিশ্চিত না হয়ে কোনো খবর প্রকাশ না করা।
ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা
এই ঘটনার মাধ্যমে সবাই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছে – গুজব শুধুমাত্র একটি মিথ্যা কথা নয়, এটি একটি সমাজবিনাশী উপাদান। পরীমনি তার সাহসিকতায় সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন।
সকলের উচিত, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সচেতন হওয়া এবং সঠিক তথ্য যাচাই করা। বিশেষ করে যারা তারকা, রাজনীতিবিদ বা গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন – তাদের জীবন নিয়ে গুজব ছড়ানো অত্যন্ত দায়িত্বহীন আচরণ।
উপসংহার
চিত্রনায়িকা পরীমনির মৃত্যু নিয়ে ছড়ানো গুজব ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহারের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে পরীমনির তাৎক্ষণিক ও সরাসরি প্রতিক্রিয়া এই গুজবকে স্তব্ধ করে দেয় এবং আবারও তিনি প্রমাণ করেন যে তিনি সাহসী, প্রতিবাদী ও সচেতন একজন শিল্পী।
এই ঘটনার পর আমাদের উচিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার আরও দায়িত্বশীল করা, গুজব রোধে সচেতনতা তৈরি করা এবং সত্য তথ্য যাচাই করার অভ্যাস গড়ে তোলা।
0 Comments