Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

আন্দামান সাগরে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র সম্ভাবনা: বাংলাদেশের উপকূলে বড় ধাক্কার আশঙ্কা

 


আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং আন্তর্জাতিক আবহাওয়া গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আন্দামান সাগরের দক্ষিণ-পূর্বাংশে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই নিম্নচাপটি ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করে আগামী ২৩ থেকে ২৮ মে'র মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে ‘শক্তি’। এটি ভারতের উপকূলীয় রাজ্য ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তথা খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে গভীর নিম্নচাপে রূপান্তরিত হওয়ার পর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর ফলে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠবে এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ঝড়ো হাওয়া, অতিবৃষ্টি এবং জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র উৎপত্তি এবং সম্ভাব্য গতি:

আন্দামান সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, আবহাওয়াবিদরা বলছেন যে এটি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ২৫ মে নাগাদ এটি গভীর নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান নিতে পারে এবং এরপর তা ‘শক্তি’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। বর্তমানে এটি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব-দক্ষিণ দিকে অবস্থান করছে এবং ধীরে ধীরে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ হিসেবে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে আঘাত হানার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামেও ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এই এলাকাগুলোর নিম্নাঞ্চল বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব:

ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ যদি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে বা এর আশেপাশের এলাকাগুলোর উপর দিয়ে অতিক্রম করে, তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন ও ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও সিত্রাং যে ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করেছিল, এবারও তেমন কিছু ঘটার শঙ্কা রয়েছে। উপকূলীয় বাঁধ দুর্বল হলে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। মাছ চাষ, লবণ উৎপাদন ও কৃষিক্ষেত্রেও মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

সরকারি প্রস্তুতি ও সতর্কতা:

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় উপকূলীয় এলাকায় সকল ধরণের মাছ ধরার ট্রলার ও নৌযানকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সমুদ্রযাত্রা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।

তাছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলোকে জনগণকে সচেতন করার জন্য মাঠে নামার আহ্বান জানানো হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট, কোস্ট গার্ড এবং ফায়ার সার্ভিসের দলগুলো প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।

উপকূলবাসীর আতঙ্ক ও প্রস্তুতি:

খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপকূলীয় জনগণ ইতোমধ্যেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা বিগত বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি ভুলতে পারেননি। অনেকেই ইতোমধ্যে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংরক্ষণ শুরু করেছেন।

সদর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মাইকিং করে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ করছেন। বহু পরিবার তাদের গবাদি পশু ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।


ঘূর্ণিঝড়ের সময় করণীয়:

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সাধারণ জনগণকে সচেতন থাকার জন্য নিচের পরামর্শগুলো দিয়েছেন:

আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্য অনুসরণ করুন — টেলিভিশন, রেডিও ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আপডেট নিন।

ঘূর্ণিঝড় সতর্ক সংকেত অনুযায়ী কাজ করুন — সরকার ঘোষিত সতর্ক সংকেত মেনে নিরাপদ স্থানে চলে যান।

প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংরক্ষণ করুন — শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, টর্চলাইট, ওষুধ ও গৃহপালিত প্রাণীর খাবার প্রস্তুত রাখুন।

চার্জে রাখুন মোবাইল ও পাওয়ার ব্যাঙ্ক — যাতে বিদ্যুৎ না থাকলেও যোগাযোগ রাখা যায়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রে যান — স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ অনুসরণ করুন।

পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা:

ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ ও ‘সিত্রাং’ থেকে আমরা শিখেছি, আগাম প্রস্তুতি থাকলে প্রাণহানি কমানো সম্ভব। তবে অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও দরিদ্র জনগণের সচেতনতার অভাবের কারণে ক্ষয়ক্ষতি অনেক সময় বাড়ে। তাই এবারের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র ক্ষেত্রেও সমন্বিত উদ্যোগ ও আগাম সচেতনতাই হতে পারে প্রধান রক্ষাকবচ।


উপসংহার:

আন্দামান সাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র সম্ভাবনা দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলীয় দেশগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো এখন সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। সঠিক প্রস্তুতি, জনসচেতনতা এবং সরকার-জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

Post a Comment

0 Comments