Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

ভারতের ‘অপারেশন সিন্ধুর

 


ভূমিকা

২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুনরায় সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এই উত্তেজনার কেন্দ্রে ছিল ভারতের একতরফা সামরিক অভিযান — ‘অপারেশন সিন্ধুর’, যার আওতায় ভারত পাকিস্তান ও আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের (AJK) বেশ কয়েকটি স্থানে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই অভিযান ভারত সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ হিসেবে ঘোষণা করলেও, পাকিস্তান একে যুদ্ধ ঘোষণা বলেই বিবেচনা করেছে।


অভিযানের পটভূমি

ভারত সরকার দাবি করেছে, সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর একটি সন্ত্রাসী হামলায় বেশ কয়েকজন সেনা নিহত হন। এই হামলার পিছনে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর হাত রয়েছে বলেই ভারতের সন্দেহ। এর প্রতিশোধ স্বরূপ ভারত ৬ মে রাতে "অপারেশন সিন্ধুর" শুরু করে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অভিযানের লক্ষ্য ছিল "সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ শিবির, অস্ত্র গুদাম এবং লজিস্টিক সাপোর্ট কেন্দ্র," যা পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভেতরে অবস্থিত। এর মধ্যে কয়েকটি লক্ষ্য ছিল মুজাফফরাবাদ, নীলম ভ্যালি, এবং বাঘ জেলার পার্বত্য এলাকায়।


পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান সরকারের প্রতিরক্ষা বিভাগ দাবি করেছে, ভারত তাদের সার্বভৌম সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে এবং নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা চালিয়েছে। তারা বলেছে যে এই হামলায় অন্তত ৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন শিশু এবং দুই নারী রয়েছেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এলাকায় ‘উচ্চ সতর্কতা’ জারি করেছে এবং সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “ভারত একতরফাভাবে শান্তি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। আমরা আমাদের জনগণ ও ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষার জন্য যেকোনো ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।”



আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই হামলার পর বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশকে সংযত থাকতে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ধরনের সামরিক পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন করে তুলতে পারে।”

চীন ও রাশিয়া ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের দীর্ঘদিনের মিত্র হওয়ায় তারা পক্ষপাতদুষ্ট বিবৃতি না দিয়ে বরং উভয়পক্ষকে উত্তেজনা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছে।


AJK-তে জনগণের প্রতিক্রিয়া

আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ এই হামলাকে গভীর উদ্বেগের সাথে গ্রহণ করেছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ভারতের এই পদক্ষেপ ছিল একটি “সরাসরি যুদ্ধ উসকে দেওয়ার” চেষ্টা। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

AJK-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট সরদার মাসউদ খান বলেন, “ভারতের এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই হস্তক্ষেপ করতে হবে।”


অপারেশন সিন্ধুর-এর লক্ষ্য ও ফলাফল

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযানকে সফল বলে দাবি করেছে। তাদের মতে, নির্ধারিত সব লক্ষ্যে নির্ভুলভাবে হামলা চালানো হয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ায় একাধিক ভিডিও ও ছবি প্রকাশ হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে, লক্ষ্যবস্তুতে আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে গেছে।

তবে পাকিস্তান বলছে, ভারত “মিথ্যা প্রচার” করছে এবং আসলে তারা বেসামরিক এলাকাগুলোতে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে যাতে তারা নিজের চোখে বাস্তবতা দেখতে পারে।


সামরিক ও কূটনৈতিক পরিণতি

এই ঘটনার পর পাকিস্তান ও ভারতের সীমান্তে সেনা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। দুই দেশের যুদ্ধবিমান নিয়মিত আকাশে টহল দিচ্ছে। পাকিস্তান তাদের ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে ‘স্ট্যান্ডবাই’ অবস্থায় রেখেছে বলেও গুজব ছড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক উত্তেজনার ঝুঁকি সবসময়ই থাকে, এবং এ ধরনের হামলা পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তোলে। যদি উভয় পক্ষ পাল্টা হামলা চালাতে থাকে, তাহলে এটি একটি সীমিত যুদ্ধেও পরিণত হতে পারে।


অন্তর্বর্তী শান্তি উদ্যোগ

সংঘর্ষ থামাতে কয়েকটি দেশ মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব একযোগে একটি শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে যা তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত ভারত বা পাকিস্তান প্রকাশ্যে কোনো আলোচনার আগ্রহ দেখায়নি।


উপসংহার

‘অপারেশন সিন্ধুর’ ছিল ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি গুরুতর মোড়। এটি প্রমাণ করে যে, উভয় দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা যে কোনো সময় সহিংস রূপ নিতে পারে। যদিও ভারত একে সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে দেখাচ্ছে, কিন্তু এর কূটনৈতিক, মানবিক ও রাজনৈতিক পরিণতি বহু গভীর।

এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে এশিয়া অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। নতুবা, এমন হামলা ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘর্ষের রূপ নিতে পারে, যার ফল পুরো অঞ্চলকেই ভুগতে হবে।

Post a Comment

0 Comments