ভূমিকা
কোরবানি ঈদ মুসলিম সমাজে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এই উপলক্ষে পশু কোরবানি দিয়ে মাংস সংগ্রহ করে পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ-উৎসব করেন। কিন্তু কোরবানির মাংসের সঠিক প্রস্তুতি ও রান্না না করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত তেল, মাংসের অপর্যাপ্ত সেদ্ধতা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাকটেরিয়ার কারণে খাবারের মাধ্যমে নানা রকম রোগ হতে পারে। তাই কোরবানির মাংস সঠিকভাবে রান্নার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো অত্যন্ত জরুরি।
১. তাজা ও গুণগত মানসম্পন্ন মাংস বেছে নিন
কোরবানির মাংস কেনার সময় সতর্ক থাকুন। মাংসটি যেন সুগন্ধযুক্ত, গাঢ় লাল বা গাঢ় গোলাপি রঙের হয় এবং স্পর্শ করলে লাল রক্ত ঝরানোর মতো বোধ হয় না।
পশুর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত হন। অসুস্থ বা বয়স্ক পশুর মাংস স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
২. মাংস সংরক্ষণ
মাংস ক্রয়ের পর যত দ্রুত সম্ভব হিমাগারে (ফ্রিজে) সংরক্ষণ করুন।
মাংস সংরক্ষণে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার কম তাপমাত্রায় রাখা উচিত, যাতে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বাধা দেয়।
৩. মাংস রান্নার আগে সঠিক প্রস্তুতি
রান্নার আগে মাংস ভালোভাবে ধুয়ে নিন। তবে অতিরিক্ত ধোয়াটা টালুন, কারণ এতে মাংসের পুষ্টি উপাদান নষ্ট হতে পারে।
কাঁচা মাংসের সাথে হাত ধোয়া ও রান্নার যন্ত্রপাতি ও স্পর্শকৃত জিনিস পরিষ্কার রাখা জরুরি।
৪. সঠিক রান্না পদ্ধতি
ক. পর্যাপ্ত সেদ্ধ করা
মাংস যেন সম্পূর্ণ সেদ্ধ হয় তা নিশ্চিত করুন। অর্ধেক সেদ্ধ বা কাঁচা অংশ থেকে খাদ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
মাংসের ভিতরের তাপমাত্রা কমপক্ষে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়া উচিত।
খ. অতিরিক্ত তেল বা মসলার ব্যবহার এড়ানো
অতিরিক্ত তেল ও মসলার ব্যবহার কমিয়ে আনুন। বেশি তেল ও মসলা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষত যাদের পেটের সমস্যা আছে তাদের জন্য।
গ. গ্রিলিং ও বেকিং
তেলবিহীন বা কম তেল ব্যবহার করে গ্রিলিং বা বেকিং করতে পারেন। এতে মাংসের স্বাদ বজায় থাকে এবং কম তেলে রান্না হওয়ায় স্বাস্থ্যকর হয়।
ঘ. অতিরিক্ত পোড়া অংশ এড়ানো
মাংস পোঁড়া বা কালো করে রান্না করলে কার্সিনোজেন নামক ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই মাংসকে সঠিকভাবে রান্না করুন, অতিরিক্ত পোড়ানো এড়িয়ে।
৫. সঠিক খাবার পরিবেশন ও সংরক্ষণ
রান্না শেষে মাংস দ্রুত পরিবেশন করুন।
বাকি মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেয়ে ফেলা উচিত।
ফ্রিজ থেকে বের করে মাংস আবার পুনরায় বারবার গরম করা উচিত নয়।
৬. স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্নাঘর পরিচালনা
রান্নাঘরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কাঁচা মাংস ও রান্না করা খাবারের আলাদা আলাদা প্লেট ও চামচ ব্যবহার করুন।
হাত ধোয়া, রান্নাঘরের বায়ুচলাচল ঠিক রাখা এবং জীবাণুমুক্ত পাত্র ব্যবহার করুন।
৭. বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন
যাদের গ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা আছে, তারা মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করবেন।
বাচ্চাদের ও বয়স্কদের জন্য হালকা ও সহজপাচ্য মাংস রান্না করাই ভালো।
উপসংহার
কোরবানির মাংস সঠিকভাবে রান্না ও সংরক্ষণ করলে এটি আমাদের পুষ্টি ও শক্তির উৎস হতে পারে, কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ রান্না ও অসতর্কতা থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করে স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে মাংস রান্না করা প্রত্যেক কোরবানির পরবর্তী দায়িত্ব।
সুস্থ জীবন যাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প খুঁজে পাওয়া জরুরি, আর সেই দায়িত্ব আমাদের সবার।
0 Comments